উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় বিমানবাহিনীর (IAF) এক সময়ের অদম্য যুদ্ধবিমান, মিগ-২১ (MiG-21 )। কিন্তু আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই এই বহু যুদ্ধের ‘নায়ক’ চলে যাবে অবসরে! তার স্থান দখল করবে নতুন এবং আরও উন্নত তেজস এমকে-১এ (Tejas Mk1A) যুদ্ধবিমান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে চণ্ডীগড়ের বায়ুসেনাঘাঁটি থেকে শেষবারের মতো উড়বে মিগ-২১। এই পদক্ষেপ ভারতীয় বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলেই মনে করা হচ্ছে।
একসময় ভারতীয় আকাশের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে পরিচিত ছিল এই মিগ-২১। প্রায় ৯০০টি বিমান ভারতের সুরক্ষায় নিয়োজিত ছিল(যার মধ্যে প্রায় ৬৬০টি ভারতেই নির্মিত হয়েছিল)। তবে এখন তার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৬-এ। ১৯৬৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের আকাশে যাত্রা শুরু করেছিল এই রুশ-নির্মিত জেটটি। ২০০০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত কার্যত ভারতীয় বিমানবাহিনীর মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে এই মিগ-২১। এরপরেই ভারতীয় বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয় সুখোই সু-৩০এমকেআই (Sukhoi Su-30MKI)।
প্রসঙ্গত, মিগ-২১-এর শেষ সংস্করণ ছিল ‘বাইসন’। ২০২৩ সালের অক্টোবরে, ৪ নম্বর স্কোয়াড্রনের মিগ-২১ যুদ্ধবিমান রাজস্থানের বারমের শহরের ওপর দিয়ে শেষবারের মতো উড়েছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধান, এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরী ঘোষণা করেছিলেন, “আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ওড়ানো বন্ধ করে দেব এবং সেগুলির পরিবর্তে এলসিএ মার্ক-১এ ব্যবহার করব।” ২০২২ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় বিমানবাহিনীর তরফে জানান হয়, চারটি অবশিষ্ট মিগ-২১ স্কোয়াড্রনকে তিন বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিগ-২৯ বিমানগুলিও ২০২৭ সালের মধ্যে বাদ দেওয়া হবে বলে জানান হয়।
প্রসঙ্গত, মিগ-২১ বিমানের সঙ্গে জড়িত অসংখ্য দুর্ঘটনাই বিমানটিকে অবসরে পাঠানোর অন্যতম কারণ। এর মধ্যে ২০২৩ সালের মে মাসে রাজস্থানে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। সেদিন সুরাটগড় বিমানঘাঁটি থেকে একটি রুটিন মহড়ার জন্য ওড়ার পর রাজস্থানের হনুমানগড়ের বাহলোল নগরের কাছে ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটির’ কারণে ভেঙে পড়ে একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। ঘটনায় ৩ জন গ্রামবাসী নিহত হন। এই দুর্ঘটনার পর ভারতীয় বিমান বাহিনী সমগ্র মিগ-২১ ফ্লিটকেই সাময়িকভাবে বাতিল করেছিল।
অপরদিকে, ভারত বর্তমানে একটি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার (fifth-generation stealth fighter) তৈরি করছে। এই মাল্টিরোল অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) একটি সিঙ্গেল-সিট, টুইন-ইঞ্জিন জেট। এটিতে থাকবে উন্নত স্টেলথ কোটিং এবং ইনবিল্ট অস্ত্রাগার। এই বিমানের বেশিরভাগ অংশ বেঙ্গালুরুর অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিতে তৈরি হবে। এটি বানাতে ১৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।