গৌড়বঙ্গ ব্যুরো: পড়ুয়ারা যখন স্কুলে একসঙ্গে বসে মিড-ডে মিল খায়, তখন কিছু সারমেয় বা পথকুকুর লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। দয়া হলে কোনও পড়ুয়া এক-দু’মুঠো ভাত দেয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাড়া খেতে হয় ওই সারমেয়দের। তবে এবার এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। মানেকা গান্ধির অনুরোধে সমগ্র শিক্ষা মিশন সাড়া দেওয়ায় এবার মিড-ডে মিল পেতে চলেছে সারমেয়রাও। মিশনের তরফে রাজ্যের স্কুলগুলিকে মিড-ডে মিল থেকে সারমেয়দের খাওয়ানোর লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশে মিড-ডে মিল দলের মধ্যে একজন কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এখন দেখার স্কুলগুলিতে এমন নির্দেশ কতটা কার্যকর হয়। কী ভাবছে গৌড়বঙ্গের বিভিন্ন মহল, তা জানার চেষ্টা করলেন উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিনিধি কল্লোল মজুমদার, পঙ্কজ মহন্ত ও দীপঙ্কর মিত্র
ঘটনার সূত্রপাত এপ্রিল মাসে। বালুরঘাটের একটি স্কুলে সারমেয়দের ঢোকা নিষিদ্ধ করে খাবার দিতে অস্বীকার করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নজরে আসে মানেকা গান্ধির সংগঠন পিপলস ফর অ্যানিমালস অর্গানাইজেশনের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি ব্রতীন চক্রবর্তীর। তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে মানেকাকে জানান। তারপরেই মানেকা বিকাশ ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষা দপ্তর, সব জায়গায় বিষয়টি জানান। তাঁর কাছ থেকে সমগ্র শিক্ষা মিশনে পথকুকুরদের মিড-ডে মিল খাওয়ানোর প্রস্তাব আসে। অবশেষে তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে স্কুলের মিড-ডে মিল সারমেয় বা পথকুকুরদের খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে।
এমন সিদ্ধান্তে ব্রতীন বলছেন, ‘অবশেষে এই লড়াই সফল হল। তার সঙ্গে নির্বীজকরণের বিষয়টিও দেখা হবে।’ বালুরঘাট নালন্দা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সৌমিত দাসের বক্তব্য, ‘আমরা পশুদের সেবার কাজ করি। উচ্ছিষ্ট ও বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে না দিয়ে তাদের দেওয়া হয়। এবার নিয়ম কার্যকর হওয়ায় শিক্ষকরাও মনোযোগী হবেন। অত্যন্ত মানবিক উদ্যোগ।’ মালদার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বাণীব্রত দাস জানান, সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফে পথ সারমেয়দের মিড-ডে মিল সংক্রান্ত মেল এসেছে। স্কুলে স্কুলে সেই মেল ফরওয়ার্ড করা হচ্ছে। স্কুলগুলি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পুরাতন মালদার কালাচাঁদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাহুলরঞ্জন দাস বলেন, ‘স্কুলে উচ্ছিষ্ট খেতে এমনিতেই ভিড় জমায় সারমেয়র দল। খুব ভালো সিদ্ধান্ত।’
পাশাপাশি, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরকে নিয়ে কুকুরগুলির জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান মহম্মদ নাজিমুদ্দিন আলি। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের নির্দেশিকা জেলায় এসেছে। সোমবার জেলার প্রতিটি সার্কেলে নির্দেশিকা পাঠানো হবে। সার্কেল থেকে প্রতিটি স্কুলে নির্দেশিকা যাবে। আগামী মাস থেকে স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের সময় পথকুকুরদের খাবার দেওয়া হবে এবং ভ্যাকসিনও দেওয়া হবে।’ রূপাহার জিএসএফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানিক নস্কর বলেন, ‘মিড-ডে মিল মাঝেমধ্যে অভিভাবকরাও শিশুদের সঙ্গে খান। পথকুকুরদের খাওয়ানোর নির্দেশ অবশ্যই মানতে হবে। এটা ভালো কাজ।’ মোহনবাটী হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অমল বিশ্বাস বলেন, ‘আগামী মাস থেকে পথকুকুরদের খাওয়ানোর নির্দেশিকা এলে অবশ্যই নিয়ম মেনে পালন করব।’