মানিকচক: স্কুল শিক্ষকদের দায়িত্বজ্ঞান হীনতার ছবি ফুটে উঠল মানিকচকের মথুরাপুরে। ঘড়িতে ১১ টা বেজে গেলেই দেখা নেই শিক্ষকের। তখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুল ফটকে ঝুলছে তালা। ফটকের বাইরে অপেক্ষারত খুদে পড়ুয়াদের ভিড়। প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমনই কর্তব্যে গাফিলতির ছবি সামনে এল বুধবার। ঘটনাটি মালদার মানিকচক চক্রের কাঁকরিবাঁধা বাণী স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। যদিও নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছুক্ষণ পরে হন্তদন্ত হয়ে স্কুলে পৌঁছলেন এক শিক্ষক। তিনি মূল ফটকের তালা খুললেন। তার অল্প কিছুক্ষণ পরেই হাজির হলেন এক শিক্ষিকা। তারও ঘণ্টাখানেক পর স্কুলে পা রাখলেন এক দিদিমণি। তবে স্কুলে দেখা মিলল না প্রধান শিক্ষক এবং আরেকজন শিক্ষিকা। গোটা ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা।
স্কুলের এই হাল জানতে পেরেই পরিদর্শনে আসেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ পারভেজ। পরিদর্শনে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ল। শুধু নিয়মবর্তিতা বা কর্তব্যে গাফিলতি নয় মিড ডে মিলে ব্যাপক চুরির ঘটনা সামনে আসলো। এদিন স্কুলে উপস্থিত ছাত্রের সংখ্যা ৫৫ জন হলেও দৈনিক মিড ডে মিল পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে ১৪৫ জন পড়ুয়ার উপস্থিতি। আর তা হাতেনাতে ধরে ফেলেন মানিকচক চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ পারভেজ। এই প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষুব্ধ অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক। মিড-ডে মিলে কারচুপি সামনে আসতেই বিপাকে পড়ে যান প্রধান শিক্ষক জিতেন মাঝি ও সহকারি শিক্ষিকা রুমকি বসাক তাঁদের দুজনকেই শোকজ করা হয়েছে বলে খবর।
জানা গিয়েছে, এই বিদ্যালয়ে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক সহ মোট ৫জন শিক্ষক শিক্ষিকা। এদিন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুপ্রকাশ মণ্ডল নির্ধারিত সময়ের পর বিদ্যালয়ের আসেন এবং তালা খুলে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করান। এই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। শুধু বলেন প্রধান শিক্ষক ছুটিতে। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের চাবি আনতে দেরি হওয়ায় এই সমস্যা। অন্যান্য দিন সময়ে বিদ্যালয়ে খোলা হয়। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিতেন মাঝিকে ফোন মারফত যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি ছুটিতে রয়েছেন এই বিষয়ে কিছু জানেন না।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রায়ই এইভাবে দেরি করে বিদ্যালয় খোলা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের নিয়ম নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দিষ্ট সময়ের অনেক দেরিতে আসেন স্কুলে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের গাফিলতির জন্য ভুক্তভোগী হচ্ছে পড়ুয়ারা।
মানিকচক চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ পারভেজের কথায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিতেন মাঝি এবং সহকারি শিক্ষিকা রুমকি বসাক যে ছুটিতে রয়েছেন সেই বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। কোনও রকম আবেদনও করেননি তারা। আজ মিড ডে মিলে ডিম ভাত দেওয়ার কথা থাকলেও নিরামিষ দেওয়া হয়েছে শিশুদের। এমনকি ৫৫ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকলেও মিড ডে মিলে ১৫৫ জন দেখানো হয়েছে। যার ফলে শোকজ করা হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। নইলে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।