দীপেন রায়, মেখলিগঞ্জ : ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে ফের উত্তেজনা।
কিছুদিন আগে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে মেখলিগঞ্জের নাকারেরবাড়ি সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসএফ-বিজিবি’র মধ্যে বৈঠক হয়। বিএসএফ ওই বেড়া দেওয়া নিয়ে সেবারে নিয়মবিরুদ্ধ কোনও কাজ না করলেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই কাজ থেকে বিরত থাকে। এরই মধ্যে এবার ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। ওই সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণে বিএসএফ বারবার আপত্তি জানিয়ে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের জন্য ডাক দিলেও বিজিবি’র আধিকারিকরা তাতে কর্ণপাত করেননি।
প্রতিবাদে ভারতীয়রা সোমবার সীমান্তের জিরো লাইনে কাঁটাতারের বেড়া দিতে গিয়েছিলেন। সেই সময় বিজিবি ও বাংলাদেশের বাসিন্দারা তাতে বাধা দিতে আসে। সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফের জওয়ানদের রীতিমতো লাঠিসোঁটা দিয়ে আক্রমণ করা হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এদিন নাকারেরবাড়ি গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসএফ জওয়ানদের নিয়ে চারটি গাড়ি সীমান্তে পৌঁছায়। তারপর বাংলাদেশিরা পালায়। পরবর্তীতে বিএসএফ–বিজিবি’র মধ্যে আলোচনা হয়। তাতে সীমান্তে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া ও সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার আইজি সূর্যকান্ত শর্মা বললেন, ‘বিজিবি’র অবৈধ সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণ নিয়ে ওদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিবি ওই কাজ বন্ধ রেখেছে। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।’
আগে দহগ্রাম-অঙ্গারপোঁতা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। তাই আগে এই সীমান্ত দিয়ে পাচার কাজের পাশাপাশি প্রায়ই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটত। ১৮ কিলোমিটারের অনেকাংশে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হলেও এখনও প্রায় তিন কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েই গিয়েছে। সেখানে বেড়া দেওয়ার জন্য বিএসএফের পাশাপাশি বাসিন্দারা মরিয়া। স্থানীয়দের দাবি, এই উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়েই পাচারকারীরা এদেশে প্রবেশ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা ঘিশুরাম রায় বললেন, ‘খোলা সীমান্তে পাচার বাড়ছে। কাঁটাতারের বেড়া দিলে আমরা অনেকটা নিশ্চিতভাবে রাতে ঘুমোতে পারি। আমাদের কৃষিকাজ, ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। দ্রুত ফাঁকা অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হোক।’
এরই মধ্যে বিজিবি’র সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণের বিষয়টি আলাদাভাবে সমস্যা তৈরি করে। স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ রায়ের বক্তব্য, ‘বিজিবি নিয়ম অমান্য করে ভুট্টাখেতের আড়ালে সেন্ট্রি পোস্ট তৈরি শুরু করেছে। বিএসএফ তাতে বাধা দিলেও বিজিবি ওই কাজ চালিয়েই যাচ্ছে। তাই আমরা নিজেরা খোলা সীমানায় অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দিতে যাই। এর জেরে বাংলাদেশিরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। নিরাপত্তার জন্য বিএসএফ আমাদের সীমান্ত থেকে হটিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশিরা আবার বিএসএফ জওয়ানদের উপর চড়াও হয়। বিজিবি’র আধিকারিকরাও সেখানে এসে বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান।’
এই পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটানোর দাবি জোরালো হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শেফালি বর্মন বললেন, ‘মাঝেমধ্যেই এলাকায় এমন উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। তিনবিঘা চুক্তি অনুযায়ী জিরো লাইনে স্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হোক বলে আমাদের দাবি।’