দীপেন রায়, মেখলিগঞ্জ: কোথাও টিনের চাল ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে। এরকম জরাজীর্ণ ঘরে যে কেউ থাকতে পারে সেটা ভাবতেই অবাক লাগে। শুধু তাই নয়, বর্ষাকালে তো ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। টিনের ফুটো দিয়ে জল ঢুকে যায় ঘরের ভিতরে। তখন স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। এই যেমন কুচলিবাড়ির ২১ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কথাই ধরা যাক। রান্নাঘর নেই। যে ঘরে শিশুরা বসে সেই ঘরের চাল ভাঙা। সবমিলিয়ে অভিভাবকরা শিশুদের কেন্দ্রে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। ওই কেন্দ্রের কর্মী মিলি দে বলেন, ‘আমি জানুয়ারি মাস থেকে এখানে কাজ করছি। প্রথম দিন থেকেই এই ভাঙাচোরা ঘরে কাজ করছি। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা নিজেরাও আতঙ্কে থাকি।’ রান্নার জায়গা না থাকায় পাশের বাড়িতে রান্না করে তা কেন্দ্রে এনে খাবার বিতরণ করা হয়। অনেক অভিভাবক নিজেরাই গিয়ে খাবার নিয়ে আসেন।
দিনের পর দিন এভাবেই মেখলিগঞ্জ ব্লকের (Mekhliganj) বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার বিতরণ ও শিক্ষাদান চলছে।
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন মেখলিগঞ্জ সিডিপিও জগদীশ বর্মন। তাঁর কথায়, ‘যেসব কেন্দ্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে, সেসব কেন্দ্রের তাদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সংস্কারের দায়িত্ব পঞ্চায়েতই নেবে।’
মেখলিগঞ্জ ব্লকে মোট ২৫০টিরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১৫০টির নিজস্ব ভবন নেই। ওইসব কেন্দ্র গৃহস্থবাড়িতে চলে। তবে যেগুলোর নিজস্ব ভবন আছে, তাদের বেশিরভাগেরই পরিকাঠামো অত্যন্ত বেহাল। কোথাও ভাঙা জানলা, দরজা। তো আবার কোথাও ছাদ চুইয়ে জল পড়ছে।
ভোটবাড়ির গুয়াবাড়ি কেন্দ্রের অবস্থাও প্রায় একই। দেড় মাস আগে হঠাৎ দেওয়ালের একাংশ ধসে পড়ে। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা এড়ানো থেকে রক্ষা পেয়েছে শিশু ও কর্মীরা। কর্মী শিপ্রা রায় সরকারের কথায়, ‘চোখের সামনে দেওয়াল ধসে পড়েছিল। তবু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। যে কোনও সময় প্রাণহানিও হতে পারে।’ এই পরিস্থিতিতে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে অভিভাবকরাও।
বাগডোকরা ফুলকাডাবরি, আমলাগুড়ি, ডাঙ্গারহাট, ভোটবাড়ি কেন্দ্রেও বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতর জল ঢোকে। কর্মী থেকে শুরু করে অভিভাবক সকলেই দ্রুত কেন্দ্রগুলি সংস্কারের দাবি তুলেছেন। আমলাগুড়ি কেন্দ্রের কর্মী সাবিত্রী রায় পাটোয়ারি বলেন, ‘বাচ্চাদের কথা ভেবেই দ্রুত সমস্ত বেহাল কেন্দ্র দ্রুত সংস্কার করা হোক।’