বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি : গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল চারজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ময়নাগুড়ি ব্লকের সাপ্টিবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ছোট দোমোহনির মাহুতেরবাড়ি এলাকায়। গুরুতর জখম অবস্থায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিক্রম রায়কে জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় বিক্রম বাড়িতে একাই ছিল। ঠাকুমা বিনতা রায় শুক্রবার দুপুর নাগাদ ময়নাগুড়ি থানায় চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে অভিযুক্ত মানব রায়, দুলাল রায় ও দীপক রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি আরও এক অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
আগামীকাল, শনিবার বিক্রমের অঙ্ক পরীক্ষা। বিক্রম পরীক্ষা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ভোটপট্টি হনুমানবক্স লোহিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্রম। পরীক্ষার সিট পড়েছে জল্পেশ মোড় এলাকার ভুসকাডাঙ্গা শ্রীশ্রী নিগমানন্দ আদর্শ বিদ্যানিকেতন। পরিবারের তরফে চেষ্টা চলছে জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে সেখান থেকে পরীক্ষা দেওয়ানোর।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির পাশেই কীর্তন চলছে। বিক্রমের ঠাকুমা বিনতা রায় কীর্তনেই ছিলেন রাতে। বিক্রমের যখন দেড় বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। বাবা বিশ্বনাথ রায় প্যান্ডেলের কাজ করতে শিলিগুড়িতে ছিলেন। ঘটনার কথা শুনে বিশ্বনাথ শুক্রবার সকালে বাড়িতে আসেন।
অভিযোগ, রাত দেড়টা নাগাদ বিক্রমদের বাড়িতে ব্যাপক চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু হয়। জড়ো হন প্রতিবেশীরা। খবর পৌঁছে যায় ঠাকুমা বিনতাদেবীর কাছে। সেখান থেকে ছুটে আসেন তিনি। বিনতাদেবী বলেন, ‘এসে দেখি পার্শ্ববর্তী ব্রহ্মপুরের বাসিন্দা মানব রায়, দুলাল রায় ও দীপক রায় এবং ছোট দোমোহনির বাসিন্দা মনোজিৎ রায় নাতিকে মারধর করে পালিয়ে যাচ্ছে। নাতি বাড়ির সামনে রাস্তার উপর অচৈতন্য অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। আমি প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় নাতিকে চিকিৎসার জন্য ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারা নাতিকে গুরুতর জখম অবস্থায় জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে রেফার করে দেয়। এখনও পর্যন্ত সেখানেই নাতি চিকিৎসাধীন রয়েছে।’ তাঁর আশঙ্কা, নাতিকে অভিযুক্তরা প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এদিন ময়নাগুড়ি থানায় বিনতাদেবীর সঙ্গে এলাকার বহু মানুষ এসেছিলেন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সকলেই।
অভিযুক্ত গ্রেপ্তার দীপক রায়ের পালটা অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তাঁরা কয়েকজন ছোট চার চাকার গাড়ি নিয়ে কীর্তন শুনতে যান ছোট দোমোহনির মাঝিরবাড়িতে। সেখানে তাঁদের গাড়ির চাকার ডিস্কের উপর লাগানো স্টিকার ছিঁড়ে ফেলে বিক্রম। সেইসঙ্গে বিক্রম চারটি চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। কীর্তন শুনে ফেরার সময় তাঁরা জানতে পারেন, পাশের পাড়া মাহুতেরবাড়ির বিক্রম এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। দীপক বলেন, আমরা খুব আস্তে চড় মেরেছি।
এদিন সকালে শিলিগুড়ি থেকে বাড়িতে ফিরে বিক্রমের বাবা বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘নৃশংসভাবে ছেলেকে মারধর করা হয়। বাড়িতে মায়ের সঙ্গেই থাকে ছেলে। একমাত্র ছেলে বিক্রম। প্রশাসনের কাছে আবেদন, ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’ ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ বলেন, ‘তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’