মাথাভাঙ্গা: আর যেন কতদিন বাকি! এখন সবার মুখে এটাই ঘুরছে। চারদিকে পুজোর প্রস্তুতি। মাথাভাঙ্গা শহরও বাদ নেই। কিন্তু এর মধ্যেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে শহরে। মহালয়া উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে শাসকদলের দুই শিবিরের মধ্যে তৈরি হয়েছে দ্বন্দ্ব। পরে অবশ্য একটি শোভাযাত্রার দিন পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিকে, এই ইস্যুতে ঘাসফুল শিবিরকে তোপ দাগছে বিরোধী পক্ষ। তাদের কটাক্ষ, শহরের নাগরিক সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের মাথাব্যথা নেই। তার বদলে নেতারা মেতে রয়েছেন শোভাযাত্রা নিয়ে।
তৃণমূল কংগ্রেসের শহর ব্লক কমিটির নবনিযুক্ত সহ সভাপতি অরুণাভ গুহ প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন, মহালয়া অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর সকালে শহরের সব পুজো কমিটি, ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা হবে। সেই মোতাবেক শনিবার মাথাভাঙ্গার মাড়োয়ারি ভবনে একটি প্রস্তুতি সভাও আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যদিকে, মাথাভাঙ্গা পুরসভার তরফেও মহালয়ার দিন শোভাযাত্রার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরসভার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা তৃণমূল শহর ব্লক সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় এবং পুরসভার চেয়ারম্যান লক্ষপতি প্রামাণিক।
এরপরই শহরের পুজো কমিটিগুলির কর্মকর্তারা এক অদ্ভুত দ্বিধায় পড়ে যান, কার ডাকে সাড়া দেবেন তাঁরা? একজনের শোভাযাত্রায় যোগ দিলে অন্যজনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হবে কি না, সেই আশঙ্কায় অনেকে নীরব। সুভাষপল্লি ইউনিট পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা শম্ভু সাহা বললেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম একটাই শোভাযাত্রা হবে, এখন দেখছি দুটো। কোনটায় যাব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
এই পরিস্থিতিতে শেষপর্যন্ত অরুণাভ গুহ পিছিয়ে আসেন। শোভাযাত্রা একদিন এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। অর্থাৎ তাঁর উদ্যোগে শোভাযাত্রা বেরোবে শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, পুরসভার চাপে পড়ে তিনি দিন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে তাঁর মুখে শোনা গেল অন্য কথা। তাঁর দাবি, ‘এবার মহালয়া রবিবার পড়ায় সবাই ছুটির আমেজে থাকবেন। তাই আগেরদিনই শোভাযাত্রা বের করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
অন্যদিকে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, এবছরই প্রথম সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সমস্ত পুজো কমিটি, শহরের ক্লাব এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ে মহালয়ার দিন শোভাযাত্রার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান লক্ষপতি প্রামাণিকের কথায়, ‘৯ বা ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরো রূপরেখা চূড়ান্ত হবে।’ ব্লক সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় জানান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহকেও এই শোভাযাত্রায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বিরোধীরা অন্যদিকে এই দ্বন্দ্বকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে। বিজেপি নেতা মনোজ ঘোষের মন্তব্য, ‘শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থায় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেদিকে নজর না দিয়ে তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা শোভাযাত্রার নামে ক্ষমতার লড়াইয়ে মেতে উঠেছেন।’ যদিও চেয়ারম্যান আশ্বাস দিলেন, খুব তাড়াতাড়ি শহরের রাস্তার গর্ত মেরামতির কাজ শুরু হয়ে যাবে।