রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ধীমান বসু এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে এবার পুলিশের কাছে গণস্বাক্ষর সংবলিত চিঠি বা মাস পিটিশন জমা পড়ছে। এই মাস পিটিশনে ১৭ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকার মানুষের সই থাকবে। এলাকার পরিবেশ কলুষিত করা, স্থানীয় লোকজনকে উত্ত্যক্ত করা এবং মদের আড্ডা বন্ধ করার দাবিতেই এই মাস পিটিশন দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে মেয়র গৌতম দেবের কাছে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষিকা রমিলা কৈরালা (ঘোষ) নালিশও করেছেন। মেয়র বলেছেন, ‘ওই শিক্ষিকা আমার কাছে এসেছিলেন। পুরো ঘটনা শুনেছি। ওয়ার্ড কাউন্সিলার এবং ধীমান দুজনের সঙ্গেই কথা বলব।’ তবে, থানায় অভিযোগ দায়েরের পরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন এই ঘটনায় দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের পদক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘মেয়র-ঘনিষ্ঠ নেতা হওয়ায় এক শিক্ষিকার অভিযোগের পরেও পুলিশ ধীমানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না। এটা মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেন না। এভাবে শহরের পরিবেশকে নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সুভাষপল্লিতে ১৭ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে ধীমানের ওষুধের দোকান রয়েছে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই তৃণমূল নেতা ওষুধের দোকানের উলটোদিকে ফুটপাথ দখল করে গজিয়ে ওঠা খাবারের দোকানগুলির সামনে চেয়ার, টেবিল নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে আড্ডা দেন। এমনিতেই সরু রাস্তার পাশে এভাবে ফুটপাথ দখল হয়ে থাকায় মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হয়। এই নেতা এবং তাঁর লোকজনের কর্মকাণ্ডে স্থানীয়রা অনেকদিন ধরেই ক্ষুব্ধ। কিন্তু শাসকদলের নেতা হওয়ায় কেউই মুখ খুলতে পারেননি।
ইদানীং ধীমান তাঁর ওষুধের দোকানের পাশের সরু গলি দখল করে চেয়ার, টেবিল পেতে আড্ডা শুরু করেছেন। অথচ এই গলি দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। অভিযোগ, আড্ডার নামে এই নেতা এবং তাঁর লোকজন মানুষকে উত্ত্যক্ত করা, এলাকার পরিবেশ নষ্ট করার কাজ করছেন।
দীর্ঘদিন এসব সহ্য করে এবার নিজেই এগিয়ে এসেছেন এক শিক্ষিকা। কৃষ্ণমায়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার আরও একটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি জাতীয় দলের ক্রিকেটার রিচা ঘোষের কাকিমা। তিনি সোমবার শিলিগুড়ি থানায় গিয়ে লিখিতভাবে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে ধীমানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মহিলা থানা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও অভিযোগকারীর বক্তব্য, ‘অভিযোগপত্র গ্রহণ করা ছাড়া পুলিশ এখনও এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি।’ শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করবে না ধরে নিয়েই এবার মাস পিটিশন দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবারই স্থানীয়রা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাস পিটিশন লিখে প্রত্যেক পরিবার থেকে সই সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, এই অঞ্চল বরাবর শান্তিপূর্ণ। এখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মেয়র, বরো চেয়ারম্যানের বাড়ি। এটা একটা শিক্ষা হাব হিসাবেও পরিচিত। এই এলাকার পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। বুধবার তাঁরা শিলিগুড়ি থানায় মাস পিটিশন জমা দেবেন বলে ওই শিক্ষিকা জানিয়েছেন।