মানিকচক: স্কুলের দুই শিক্ষকের মারামারিতে রক্তারক্তি মানিকচকের মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুলে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের ভেতরে ওই হাতাহাতি হয় বলে অভিযোগ। তবে ঠিক কী কারণে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন দুই শিক্ষক তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর থেকেই স্কুলের মূল ফটক তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার এমনই চেষ্টা হয় যে, মানিকচক থানার পুলিশ আর বিদ্যালয় পরিদর্শক দপ্তরের দুজন শিক্ষাবন্ধুকে মোতায়েন করে সাংবাদিকদের মূল ফটকে আটকে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে অপেক্ষা করে বারবার ফোন করেও প্রধান শিক্ষকের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দুই শিক্ষকের সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে উঠে আসছে বিভিন্ন তথ্য।
এই স্কুলের একজন মহিলা শিক্ষিকাকে কেন্দ্র করে ওই গণ্ডগোল বলে দাবি করছেন অনেকে। আর সেই গণ্ডগোলের কারণ হিসাবে ত্রিকোণ প্রেমের তথ্যও উঠে এসেছে। এমনটাই দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক। তবে এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ স্কুলের অধিকাংশ সহশিক্ষক। ঘটনার বিষয়ে মুখ খুললে তাদের উপর শাস্তির খাঁড়া ঝুলতে পারে বলে আশঙ্কা অধিকাংশ সহশিক্ষকের। তবে দুই শিক্ষকের সংঘর্ষের ঘটনা স্বীকার করে নিয়েছেন মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উত্তমকুমার ঝা। শুক্রবার এবিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গোটা ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুলের গণিত শিক্ষক সানোয়ার আলি পারভেজ ও জীববিদ্যার শিক্ষক মহম্মদ খালেক বারবার ছোটখাটো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছিলেন। দুই শিক্ষককে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ নিজ কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রধান শিক্ষক অতীন্দ্রনাথ দাস। অভিযোগ, আলোচনা চলাকালীন দুই শিক্ষক বচসায় জড়িয়ে পড়েন এবং বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। হাতাহাতিতে দুই শিক্ষকই অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে জড়িত একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বারবার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রধান শিক্ষককে বোতল ছুড়ে মারার চেষ্টা, সহশিক্ষককে মারধর, একজন প্রবীণ সহশিক্ষককে গলা ধাক্কা সহ ভূরিভূরি অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে শাসকদলের নেতা বলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে প্রধান শিক্ষক অতীন্দ্রনাথ দাসকে বারবার ফোন করা হলে তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটি একটি ছোটখাটো বিষয়। সবকিছুই নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ তারপর থেকে দীর্ঘক্ষণের জন্যে ফোন সুইচ অফ করে দেন প্রধান শিক্ষক।
এবিষয়ে একজন অভিভাবক শেখ বাবলু বলেন, ‘দুই শিক্ষকের সংঘর্ষের খবর পেয়ে স্কুলে আসি। কিন্তু স্কুলের মেইন গেটে তালা। আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে শুনেছি একজন মহিলা শিক্ষিকাকে কেন্দ্র করে ওই ঝামেলা। ত্রিকোণ প্রেমের বিষয় হতে পারে।’ অভিভাবক শেখ বাবলুর আরও অভিযোগ, ‘শিক্ষকরা এমন কাণ্ড করলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে।’
এবিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ অধিকাংশ সহ শিক্ষকই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহ শিক্ষকের দাবি, স্কুলে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মুখ খুললে তাদের উপর শাস্তির খাড়া ঝুলতে পারে। তবে মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উত্তমকুমার ঝা জানান, শিক্ষকের মধ্যে ঝামেলার ঘটনা তিনি ফোন মারফত শুনেছেন। শুক্রবার ওই বিষয়ে একটি জরুরি সভা ডাকা হয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতর দুই শিক্ষকের সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এরকম সংঘর্ষের ঘটনা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কুপ্রভাব ফেলবে।’