আজাদ, মানিকচক: আব্বু কি আর বাড়ি আসবে না? সাংবাদিককে কাতর প্রশ্ন জমি ব্যবসায়ী আবু কালাম আজাদের চার বছরের ছেলে তৌসিফ রেজার। বৃহস্পতিবার রাতে ওই তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার বিকেলে গোপালপুরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। সবটা নিজের চোখে দেখলেও খুদে হয়তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। সে আশা করছে, হয়তো তার বাবা কোথাও গিয়েছেন, কাজ মিটলে আবার ফিরে আসবেন। তাই শনিবার বাড়িতে আসা সকলকেই একই প্রশ্ন করেছে ওই খুদে।
আজাদের গোপালপুরের বাড়িতে এদিনও শোকের পরিবেশ। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৩৬ ঘণ্টা। এখনও পরিবারের মহিলারা কেঁদেই চলেছেন। মৃতের স্ত্রী গর্ভবতী। তিনিও বিষয়টি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। আত্মীয়স্বজনরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ছেলের সম্পর্কে কথা বলতে বলতে বারবার চোখ মুছছেন বাবা আইনুল হক। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। শুক্রবার মূল অভিযুক্ত মাইনুল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার মাইনুলের ভাই সহিদুল শেখ এবং তাঁর দুই সহযোগীকে ধরে পুলিশ।
কেন আজাদকে এভাবে নৃশংস খুন করা হল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সেইসঙ্গে উঠে আসছে নানা তত্ত্বও। মৃতের পরিবারের দাবি, শুধুমাত্র জমি ব্যবসার রেষারেষিতে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী মাইনুল শেখ এবং তাঁর সহযোগীদের হাতে খুন হতে হয় আজাদকে। যদিও পুলিশের দাবি অন্য। পরকীয়ার কারণে এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান পুলিশের। আজাদের পরিবার বলছে, বাড়িতে আজাদের গর্ভবতী স্ত্রী এবং চার বছরের এক ছেলে আছে। তাঁকে ফাঁসানোর জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন মাইনুল শেখ এবং তাঁর সহযোগীরা। আইনুলের কথায়, ‘জমি ব্যবসায় আমার ছেলের সঙ্গে পেরে উঠছিল না মাইনুল। সেজন্য আমার ছেলেকে খুন করে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দিল। আইনের ওপর আমার বিশ্বাস আছে, ছেলে সঠিক বিচার পাবেই।’
বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীপুরে জালালউদ্দিন শেখের বাড়িতে জন্মদিনের নেমন্তন্ন রক্ষা করতে যান কালাম। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তাঁর বাবা আইনুল। কালাম সেই রাতে বাড়ি ফিরবেন না বলে জানিয়েছিলেন। ব্যবসার কাজে সহযোগী জুলফিকারের বাড়িতে থাকবেন। এর আধ ঘণ্টা পরেই জুলফিকার তাঁকে ফোন করেন এবং জানান আজাদকে খুন করা হয়েছে।
আজাদের পরিবারের দাবি, আজাদের ওপর তাঁর প্রতিযোগীদের আক্রমণ এই প্রথম নয়। এর আগেও দুইবার কালামের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ হয়েছে। ওই পরিবারের আরও দাবি, এক বছর আগে অমৃতি সেকেন্দারপুরে রাজ্য সড়কের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র সহ দুই বাইক আরোহী তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। কোনওরকমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন ওই জমি ব্যবসায়ী।