কল্লোল মজুমদার ও সৌরভ ঘোষ, মালদা: মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (Malda Medical School & Hospital) ছানি অপারেশন করতে এসে চরম অপমানিত হলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া সমাজসেবী কমলি সোরেন (Kamali Soren)। অভিযোগ, পরিচয় দেওয়ার পরেও তাঁর ঠাঁই হয় এক বিছানায় তিন রোগীর সঙ্গে। আরও অভিযোগ, এই নিয়ে তাঁর অনুগামীরা প্রতিবাদ জানাতে গেলে কর্তব্যরত নার্স কমলি সোরেনের উদ্দেশে ‘রাষ্ট্রপতি, ফাস্টোপতি…’ মন্তব্য করে কটাক্ষ করেন।
মালদা মেডিকেলে চিকিৎসারত কমলির ছবি সহ নার্সের ওই মন্তব্যের একটি অডিও–ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন জেলা পরিষদের বিজেপি সদস্য তারাশংকর রায়। যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। যদিও ওই অডিও–ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ।
অনুগামীদের কাছে কমলি সোরেন গুরুমা নামে পরিচিত। তারাশংকরের অভিযোগ, ‘গুরুমার ছানি অপারেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর একটি বেডে তিনজনকে রাখা হয়। এই নিয়ে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে হাসপাতালের ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের নার্সরা গুরুমাকে প্রচণ্ড অপমান করেন। উনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন, এটা জানানোর পরেও ওঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে কটাক্ষ করেন, রাষ্ট্রপতি, ফাস্টোপতি… বলে।’ তারাশংকর এদিন দাবি করেন, ‘আমি কর্তব্যরত নার্সদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাব।’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পদ্মশ্রী পান মালদার গাজোলের প্রত্যন্ত কোটালহাটি গ্রামের কমলি সোরেন। কমলিদেবীর বাপের বাড়ি পুরাতন মালদার বাগমারা গ্রামে। কম বয়সে বিয়ে হয়। কন্যাসন্তান হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি চলে আসেন গাজোলের কোটালহাটি গ্রামে। সেখানে রাজেন বাবাজির আশ্রমই এখন কমলি সোরেনের ঠিকানা। এখানে থেকেই গত ৩০ বছর ধরে আদিবাসীদের ঐতিহ্য, তাদের উন্নয়ন ও চিকিৎসায় সাহায্য করার কাজ করে চলেছেন তিনি৷ যদিও এই নিয়ে কমলির মন্তব্য, ‘জীবনভর গরিব-দুঃখীদের সেবা করেছি, বিনিময়ে কিছুই চাইনি। আজ আমি নিজে অসুস্থ। একটু ভালোভাবে থাকার সুযোগও মিলছে না। সেবিকাদের বললেই তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে মালদা মেডিকেলের অধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ বরের বক্তব্য, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। তাই কোনওকিছু বলা সম্ভব নয়।’
মালদা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের সাফাই, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ড ও কেবিন সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে কমলি সোরেনের মতো একজন বিশিষ্ট মহিলার চিকিৎসায় যেন কোনওরকম গাফিলতি না হয়, তা আমরা নিশ্চিত করব। চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘তৃণমূলের চুনোপুঁটি নেতারা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলেও স্যর স্যর করা হয়। আর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন মহিলা চিকিৎসা করাতে গিয়ে কটাক্ষের মুখে পড়ছেন। আমার প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী তো রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বড় বড় কথা বলেন। তাহলে কেন এক বেডে তিনজন রোগীকে শুয়ে থাকতে হবে?’