Malda Information | গরমের ছুটিতে লিচু বিক্রি করে আয় শিশুদের

Malda Information | গরমের ছুটিতে লিচু বিক্রি করে আয় শিশুদের

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


সেনাউল হক, কালিয়াচক: জ্যৈষ্ঠের দুপুরে চারিদিক শুনসান৷ ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে একের পর এক ছোট-বড় গাড়ি৷ সেই সড়কের ধারে নজর দিলেই দেখা মিলবে বেশ কিছু খুদের৷ হাতে লিচুর থোকা৷ বেশ লোভনীয়৷ কোনও গাড়িচালক লিচুর (Lychee) লোভে গাড়ি থামালেই তাদের দৌড় শুরু৷ মুহূর্তের মধ্যে সেই গাড়ির চালকের পাশে বেশ কয়েকজন৷

কেউ ভাবতেই পারেন, এই বাচ্চারা হয়তো শিশুশ্রমিক৷ সেই ভাবনা কিন্তু ভুল। ওরা কেউ শ্রমিক নয়৷ তবে অভাবের সংসারের মানুষ৷ প্রত্যেকেই পড়াশোনা করে, স্কুলে যায়৷ এখন গরমের ছুটি চলছে৷ স্কুল যাওয়ার তাড়া নেই৷ তাই অবসর সময়ে তারাও একটু রোজগার করতে চায়৷ লিচু বিক্রি করে সেই অর্থ বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে চায়৷ যাতে সংসারের চাকাটা একটু গতি পায়৷ তাই সকালের পড়াশোনা শেষ করে তারা হাতে তুলে নেয় লিচুর থোকা৷ কখনও ১০০ টাকায়, কখনও বা ৮০ টাকায় সেই থোকা তুলে দেয় ক্রেতাদের হাতে৷

জাতীয় সড়কের ধারে লিচু বিক্রি করছিল সপ্তম শ্রেণির আহাদ৷ বলল, ‘এখন স্কুল ছুটি৷ তাই লিচু বিক্রি করছি৷ পড়াশোনার ফাঁকে এভাবে লিচু বিক্রি করলে শুধু যে কিছু উপার্জনই হয় তা নয়, বেশ মজাও লাগে৷ একা তো এই কাজ করি না৷ বন্ধুরাও থাকে৷ সবার সঙ্গে সময়টা আনন্দে কেটে যায়৷ বাড়িতেও কিছু টাকা দিতে পারি৷’

ফতেমা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী৷ সে অবশ্য আহাদদের মতো দৌড়ে ক্রেতা ধরতে পারে না৷ জাতীয় সড়কের ধারে গামলায় লিচু নিয়ে বসে৷ অনেকে তার সামনে এসে গাড়ি থামান৷ তার কাছ থেকে লিচু কিনে নিয়ে যান৷ তার কথায়, ‘এভাবে লিচু বিক্রি করা আমাদের পেশা নয়৷ বাবা শ্রমিক৷ আমরা গরিব ঘরের ছেলেমেয়ে৷ এই কাজ করা খানিকটা মজা, অনেকটাই পরিবারকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য৷ কারণ, এই উপার্জন বাবা-মা আমাদের জন্যই রেখে দেন৷ এই টাকায় কখনও গৃহশিক্ষকের বেতন দিই, কখনও নিজেদের প্রয়োজনের জিনিস কিনি৷’

প্রশ্ন উঠতে পারে, অভাবের সংসারে জামাল, ফতেমা, সোয়েবরা লিচু কেনার টাকা পায় কোথায়? না, এদের লিচু কিনে বিক্রি করতে হয় না৷ বছরের এই সময় প্রতিটি বাগানে লিচু ভাঙার কাজ শুরু হয় জোরকদমে৷ বর্তমানে কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জ, চাঁদপুর, বাথান, করারি চাঁদপুর, পাগলা ব্রিজ সহ বিভিন্ন বাগানে লিচু ভাঙার কাজ চলছে। এই খুদের দল সেসব বাগানে শ্রমিকদের সাহায্য করে৷ পারিশ্রমিক হিসাবে টাকা নয়, মেলে লিচু৷ বাড়তি লিচুও পচে যাওয়া এড়াতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর তারা সেগুলো সড়কের ধারে বিক্রি করে।

কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে শিলিগুড়ির (Siliguri) দিকে যাচ্ছিলেন সত্যজিৎ সরকার৷ পরিবার নিয়ে পাহাড়ে ক’টা দিন কাটানোই উদ্দেশ্য৷ খুদেদের দেখে গাড়ি থামিয়ে লিচু কিনছিলেন৷ বললেন, ‘প্রথমে খানিকটা অবাক হলেও পরে এই বাচ্চাদের লিচু বিক্রির উদ্দেশ্য শুনলাম৷ এই বয়সেই ওরা যে এত ম্যাচিওর, ভাবা যায় না৷ তবে জাতীয় সড়কের ধারে এভাবে লিচু বিক্রি করাটা খানিকটা বিপজ্জনক৷ অভিভাবকদের এদিকটাও ভেবে দেখতে হবে৷’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *