Malbazar | সন্তান বিক্রির পর পুলিশ নিয়ে উদ্ধার

Malbazar | সন্তান বিক্রির পর পুলিশ নিয়ে উদ্ধার

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


সুশান্ত ঘোষ, মালবাজার: শনিবার সকালে সন্তানকে বিক্রি করে রাতে আবার সেই সন্তানের জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হলেন এক মহিলা। রাতেই ওই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে আনে। রবিবার সকালে বাচ্চা ও মাকে জলপাইগুড়ি হোমে পাঠানো হয়েছে। তবে, কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় শিশুটির ক্রেতার বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি বলে পুলিশের দাবি।

এমন ঘটনায় রবিবার সকাল থেকে মাল (Malbazar) শহরে হইচই পড়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূেত্র জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে মাল শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক মহিলা তাঁর এক বছরের সন্তানকে মাত্র ৯০০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। ওই মহিলার নাম অনামিকা গুহ। তাঁর স্বামী রাজু গুহ পেশায় হাট ব্যবসায়ী। প্রতিবেশীরাই জানিয়েছেন, ওই মহিলা মাঝেমধ্যেই স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এক বছর আগেও ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলেন ওই মহিলা। তাঁর বাপের বাড়ি মেটেলিতে।

মাল শহরের বাজার রোডের বাসিন্দা কানু দাস নামে নিঃসন্তান ব্যক্তির কাছে তিনি বিক্রি করেন তাঁর এক বছরের সন্তানকে। কানুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই মহিলা শনিবার সকালে তাঁদের বাড়িতে যান। বলেন, তোমাদের তো সন্তান নেই, তাই সন্তান নেবে? আমি ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য সন্তান প্রতিপালনে ব্যর্থ। ৯০০০ টাকা দিলেই আমি আমার সন্তানকে তোমাদের হাতে তুলে দেব। সন্তান না থাকায় কানুর পরিবার রাজি হয়ে যায় বাচ্চাটির দায়িত্ব নিতে। সেইমতো স্ট্যাম্প পেপারে লিখেই শিশুটিকে নিজের বাড়িতে রেখে দেন কানু। কিন্তু রাতে অনামিকা আবার পুলিশ নিয়ে তাঁদের বাড়িতে যান এবং বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বিষয়টি মানতে চাইছেন না। তাই আপনাদের টাকা ফেরত নিয়ে আমার বাচ্চা ফেরত দিন।’

বাচ্চার বাবার বিষয়টি সামনে আসতেই আকাশ থেকে পড়ে কানুর পরিবার। কারণ, তাঁেদর কাছে অনামিকা সন্তানের জন্ম সংক্রান্ত হাসপাতালের যে  কাগজপত্র দিয়েছিলেন সেখানে স্বামী মৃত বলে লেখা ছিল। অনামিকা তাঁদেরও বলেছিলেন, সন্তানের বাবা মৃত।

এমন ঘটনায় শনিবার রাতেই মালবাজার রোডে ভিড় জমে যায়। শিশুটির জন্ম সংক্রান্ত নথিপত্র ও স্ট্যাম্প পেপারে লিখিতভাবে টাকা নিয়ে সন্তান বিক্রি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। পুলিশ দ্রুত শিশু ও ওই মহিলাকে নিয়ে থানায় চলে আসে।

কানু রবিবার বলেন, ‘নিঃসন্তান হওয়ায় আমাদের মনে একটা কষ্ট ছিল। তার ওপর আবেগের বশে ওই মহিলার কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। তাই কাজটা করে ফেলেছি। এতকিছু জানতাম না।’ বিষয়টি নিয়ে ওই মহিলার স্বামীর বা তাঁর পরিবারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মাল থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিক অবশ্য দাবি করেন, ‘টাকার বিনিময়ে বাচ্চা বিক্রি করার কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর্থিক সমস্যার জন্য মহিলা তাঁর সন্তানকে ওই ব্যক্তির কাছে রাখতে এসেছিলেন। যদিও পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে শিশুটিকে হোমে পাঠানো হয়। সম্ভবত ওই ব্যক্তি পরবর্তীতে শিশুিটকে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করবেন।’

জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান মান্না মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘রবিবার এমনিতেই সিডব্লিউসি বন্ধ থাকে। মাল থানা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরবর্তীতে মা ও বাচ্চাকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়।’

এমন ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিশুটির জন্ম সংক্রান্ত নথিপত্রের তথ্যে গরমিল কেন ছিল, স্ট্যাম্প পেপারে টাকা নিয়ে বাচ্চা নেওয়ার কথা থাকলেও কেন কানু দাসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি, এমন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি।

বিশিষ্ট আইনজীবী সুমন শিকদার বলেন,  ‘এরা যে পদ্ধতিতে বাচ্চাটিকে নিয়েছে সেই পদ্ধতি একদমই আইনসিদ্ধ নয়। এর জন্য কিছু নিয়মনীতি আছে। সেই পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত ছিল।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *