মালবাজারঃ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, সেটাও নাকি ভুয়ো। আর এই ভুয়ো ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট বানানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হল এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার থানা এলাকায়। ধৃতের নাম মনিরুল ইসলাম। সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল থেকে মালবাজার থানায় সিভিক ভলেন্টিয়ার পদে কর্মরত রয়েছে সে। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সেক্ষত্রে প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় সে। কিন্তু এযাত্রায় তাঁকে প্রমান সহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, মনিরুলের নিজের বাড়িতেই একটি সাইবার ক্যাফে রয়েছে। ওই ক্যাফেতে বসেই এই ভুয়ো ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটগুলি বানাত সে।
প্রসঙ্গত, অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা করে এই সার্টিফিকেট সরাসরি প্রার্থীরা সংগ্রহ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু চটজলদি এই সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য সম্প্রতি বাগরাকোট এলাকার কিছু যুবক মালবাজার থানার ডিআইবি অফিসে মনিরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মনিরুলও টাকার বিনিময়ে সেই যুবকদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট বানিয়ে দেয়। শংসাপত্রে থানার আইসির সাক্ষরও জাল করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু রবিবার ওই যুবকেরা ডিআইবি অফিসে আসে তাঁদের শংসাপত্রে কিছু সংশোধনের জন্য। তখন সেই শংসাপত্র দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিআইবি আধিকারিকের সন্দেহ হয়। তিনি থানার আইসিকে সমস্ত তথ্য ও চারটি শংসাপত্র দেখান। তখনই জানা যায়, এই শংসাপত্র সবকটাই জাল। আসল শংসাপত্রে ডিজিটাল সাক্ষরের যে কিউআর কোড থাকে সেটাও ছিল না এই জাল শংসাপত্রে। ওই যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করায় মনিরুলের নাম সামনে আসে। এরপরেই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মালবাজার থানার পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৮(৪),৩৩৬(৩), ৩৪০(২),৩৪১(১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে। প্রতি জাল শংসাপত্রের বিনিময়ে মনিরুল ৪০০০ থেকে ৬০০০ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত মনিরুল ইসলামের বাড়ি মাল থানার কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেপুচাপুর বস্তি এলাকায়। রাতে সে থানায় ডিউটি করলেও দিনে সে নিজের বাড়ির ক্যাফেতে বসে সার্টিফিকেটগুলি বানাতো। সেগুলো রাতে থানায় নিয়ে এসে আইসির স্ট্যাম্প লাগাতো, নিজেই তাতে সাক্ষর করতো। সিভিকের কাজের পাশাপাশি নিজের চায়ের বাগানও আছে তাঁর। মনিরুলের বাবা লুৎফার রহমান সেই বাগান দেখাশোনার কাজ করেন। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২২ টি জাল শংসাপত্র এখনও পর্যন্ত মনিরুল বিভিন্ন যুবককে দিয়েছে। তবে পুলিশের অনুমান, সেই সংখ্যাটি ১৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়াও বেআইনি ভাবে টাকার বিনিময়ে ভুয়ো পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিভিকে নিয়োগের আগে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিল সে। বাড়িতে স্ত্রী সহ এক পুত্র সন্তান আছে মনিরুলের। আপাতত মনিরুলকে গ্রেপ্তার করে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পাঠানো হয়েছে। যদিও পুলিশ মহলের একাংশের ধারণা, মনিরুলের একার পক্ষে এত বড় বেআইনি কাজ করা সম্ভব নয়, নিশ্চয়ই তাকে অন্য কেউ সহযোগিতা করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।