মালবাজার: শনিবার রাতে মালে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় চাপে পড়ে দুঃখপ্রকাশ করলেন ডাম্পার মালিকরা (Dumper house owners)। সোমবার মেটেলিতে একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিক বৈঠক করে ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন তাঁরা। ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের এমন কোনও নিগ্রহের ঘটনা ঘটবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গ সংবাদের সাংবাদিক অভিষেক ঘোষ এবং অপর এক সাংবাদিক অনিল ছেত্রীর নামে যে অভিযোগ করা হয়েছিল তা তুলে নেওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন ডাম্পার মালিকরা। সেইসঙ্গে শনিবার রাতের ঘটনায় ডাম্পার মালিকদের তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মামলা নিয়ে পরবর্তীতে মীমাংসায় আসার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
শনিবার রাতে হামলার ঘটনায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ডাম্পার মালিক মহম্মদ রাসেল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হলেও রবিবার জলপাইগুড়ি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। ওদলাবাড়িতে রীতিমতো বাজি ফাটিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানায় অনুগামীরা। শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের ঘনিষ্ঠ রাসেলের বিরুদ্ধে বালি পাচার, নথিবিহীন ডাম্পার চালানো সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। ফলে বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছিল শাসকদলের ওপর মহলে।
রবিবার ডাম্পার মালিকদের একাংশ ব্যক্তিগতভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন সাহা, কাউন্সিলার সুরজিৎ দেবনাথ, অমিতাভ ঘোষ ছাড়াও দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডাম্পার মালিকদের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট চারজন ডাম্পার মালিক অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতেই মালবাজার শহরের চারজনকে গ্রেপ্তার করে মাল থানার পুলিশ। এতেই শহরে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়। গ্রেপ্তার হওয়া তরুণদের মুক্তির দাবিতে সোমবার সকালে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল দেখা করে মাল থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিকের সঙ্গে। সেই প্রতিনিধিদলে মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি, বিজেপির রাকেশ নন্দী, সিপিএমের রাজা দত্ত, তৃণমূলের অমিত দে, আইনজীবী সুমন শিকদার ও সাংবাদিকরা ছিলেন। বৈঠকের পর পুর চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ যদি সদর্থক পদক্ষেপ না করে তবে সোমবার বিকেলেই একটি সর্বদলীয় বৈঠক করা হবে। পরে অবশ্য সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। ঠিক কী কারণে বৈঠকটি ভেস্তে যায় তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি উৎপল। তবে তৃণমূলের একটি অংশের অনুমান, দলীয় চাপে পড়েই পিছু হটেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান।
এদিকে, শনিবারের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে এদিন পুরসভায় আসেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক। সেখানে মালবাজার পুরসভার কাউন্সিলারদের বিরুদ্ধে ডাম্পার মালিকদের করা অভিযোগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। কাউন্সিলারদের একাংশের অভিযোগ, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউন্সিলারদের নাম অভিযোগপত্রে ঢোকানো হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, মন্ত্রী অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে মীমাংসার পরামর্শ দেন।
বিকেলে মালবাজার (Malbazar) শহরের কাছে বৈঠকে বসে তৃণমূল নেতৃত্ব এবং ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেখানেই রাসেল ছাড়াও, ওদলাবাড়ি ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শর্বন গুপ্তা, সুকান্ত চৌধুরী, তৃণমূল নেতা তমাল ঘোষ, তৃণমূলের ওদলাবাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কনভেনার আনন্দ মুন্ডা, রাজেশ ছেত্রী, অশোক চিকবড়াইক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছিলেন সাংবাদিকরাও। সকলের সামনেই সমস্ত সাংবাদিকের মতামত শুনে ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সামগ্রিক ঘটনার ও মামলার বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছে।
সমস্ত ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাসেল বলেন, ‘শনিবারের ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু নয়। যেটা হয়েছে সেটাও কাম্য নয়। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই।’ তিনি ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তবে সাংবাদিকদের নিগ্রহের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
বিজেপির মাল বিধানসভার আহ্বায়ক রাকেশ নন্দী বলেন, ‘ঠিক কী কারণে সর্বদলীয় বৈঠক স্থগিত করা হল, সেই বিষয়টি চেয়ারম্যানের জনসমক্ষে বলা উচিত।’ সিপিএমের মাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনাকে আমরা সমর্থন করি না। তবে শনিবার রাতের ঘটনায় কিছু উসকানিমূলক মন্তব্যের জন্য ঘটনাটি এত বড় আকার নিয়েছে। সেইসঙ্গে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের নাম অভিযোগপত্রে নেই।’