অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: আবার মাল পুরসভা (Mal Municipality) থেকে সন্দেহজনক জন্ম শংসাপত্র ইস্যু (Beginning certificates) করার ঘটনা সামনে এল। এবার মুম্বই পুলিশের তরফে মালবাজার পুরসভায় এই সংক্রান্ত চিঠি এসেছে। মুম্বইয়ের এক ব্যক্তির পাসপোর্টের আবেদনে মেটেলির ঠিকানা দিয়ে মালবাজার পুরসভা থেকে দেওয়া জন্মের শংসাপত্র ব্যবহার হয়েছে। তবে পুরসভার তরফে এখনও তথ্য যাচাই করে মুম্বই পুলিশকে (Mumbai Police) জানানো হয়নি। যে সময় এই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল তখনও দায়িত্বে ছিলেন ফেরার পুরকর্মী প্রসেনজিৎ দত্ত। ফলে আশঙ্কা থাকছে সেই শংসাপত্রের বৈধতা নিয়ে। তবে আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই শংসাপত্রের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখবে পুরসভা।
মুম্বই পুলিশের তরফে একটি জন্মের শংসাপত্র যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে মালবাজার পুরসভার জন্মমৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগে। এছাড়াও একটি চিঠি পাঠিয়ে সমস্ত তথ্য জানতে চেয়েছে মুম্বই পুলিশের এমআরএ মার্গ পুলিশ স্টেশন। পুলিশ যাঁর জন্মের শংসাপত্র যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে, শংসাপত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার শহরে। জন্মের শংসাপত্র ৫ অক্টোবর ২০২৪ সালে ইস্যু করেছে মালবাজার পুরসভা। জন্মের সাল ১৯৮২। স্থায়ী ঠিকানা লেখা মেটেলি বাজার।
সন্দেহের শুরু এখানেই। ১৯৮৯ সালে মাল পুরসভা গঠন হয়। ফলে ১৯৮২-র জন্মের নথি কীভাবে মাল পুরসভায় সংরক্ষিত হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে সময়ে এই জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল সে সময়ে সেই বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন প্রসেনজিৎ। বিভিন্ন জাল নথিপত্র ব্যবহার করে এর আগে মাল পুরসভা থেকে ১১টি জন্মমৃত্যুর শংসাপত্র ইস্যু হয়েছিল। সেগুলি সবই আবার আফগান নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য। সেই ১১টি শংসাপত্রে মেটেলি বাজার এলাকার এক পরিবারের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই ঠিকানা ব্যবহার করেই মেটেলি ব্লকের রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট নিয়ে মাল পুরসভায় জমা করা হয়েছিল।
গত বছর অক্টোবর মাসে প্রথম সিবিআইয়ের নজরে আসে এই বিষয়টি। ডুয়ার্সে এসে সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা মেটেলির সেই পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। এবারও মুম্বই পুলিশ হাবিবুল্লা মহম্মদ খুশল নামে এক ব্যক্তির পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে জমা পড়া জন্ম সার্টিফিকেটের নথি যাচাইয়ের জন্য মাল পুরসভায় পাঠিয়েছে। এবারও মেটেলির ওই একই পরিবারের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। আবেদনকারীর পদবি অনুযায়ী তিনি সম্ভবত কোনও আফগান পরিবারের সদস্য। কারণ ‘খুশল’ একটি আফগান উপজাতি। সেই উপজাতির কারও পদবিতেই সাধারণত উপজাতির নাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি চা বাগানের শ্রমিকদের জাল মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ক্লেম করার ঘটনাও ঘটেছে। সেই ঘটনায়ও সরাসরি যোগ পাওয়া গিয়েছিল মালবাজার পুরসভার। বীরপাড়ার ডিমডিমা চা বাগানের জয়পাল মাছুয়া জীবিত থাকতেই তাঁর পিএফের ডেথ ক্লেমের কাগজপত্র পৌঁছায় জলপাইগুড়ি পিএফ অফিসে। জয়পালের মৃত্যুর জাল শংসাপত্র বানানো হয়েছিল মাল পুরসভার জন্মমৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগ থেকে।
এর আগে বেআইনিভাবে মাল পুরসভা থেকে ১১ জন আফগান নাগরিকের জন্ম শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল প্রসেনজিতের সময়ে। তৎকালীন পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহার ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছিল সেই শংসাপত্রগুলিতে। গত ১৭ ডিসেম্বর স্বপন মালবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে। তার পরদিন থেকেই মাল পুরসভার ওই গ্রুপ সি কর্মীর আর খোঁজ মেলেনি। তবে পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ‘এই শংসাপত্রের বিষয়টি যাচাইয়ের পর সঠিকভাবে বলা সম্ভব সেই আসল না নকল। শীঘ্রই সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
জন্মমৃত্যুর জাল শংসাপত্রের বিষয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তের দাবি তুলেছে বিরোধীরা। বিজেপির টাউন মণ্ডল সভাপতি নবীন সাহা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংস্থার উচিত প্রসেনজিৎকে গ্রেপ্তার ও সঠিক তদন্ত করে অন্য শাগরেদদের নাম প্রকাশে আনা।’ কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সৈকত দাস বলেন, ‘দুর্নীতির চরমে পৌঁছে গেছে তৃণমূল নামক কোম্পানিটি। এখন সমস্ত দেশবিরোধীর আশ্রয়স্থল এই রাজ্য, তার দায় এই প্রশাসনের।’