Mal Municipality | ফের জাল সার্টিফিকেট, কাঠগড়ায় মাল পুরসভা

Mal Municipality | ফের জাল সার্টিফিকেট, কাঠগড়ায় মাল পুরসভা

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: বার্থ সার্টিফিকেট জালিয়াতিতে গোটা দেশেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে মাল পুরসভা (Mal Municipality)। মঙ্গলবার মুম্বই পুলিশের পাঠানো নথি পরীক্ষা করে দেখা গেল পুরসভা থেকে ইস্যু করা ওই আফগানির সার্টিফিকেটও জাল। পুরসভার তরফে স্পষ্ট চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, হাবিবুল্লা মহম্মদ খুশলের জন্মের শংসাপত্র মালবাজার পুরসভা থেকে দেওয়া হলেও সেটা জাল। পাশাপাশি মহম্মদ হাসান নামের জনৈক ব্যক্তির পাসপোর্টের নথি যাচাইয়ের ফাইল এসেছে পুরসভায়। সেখানেও দেখা গিয়েছে সেই ব্যক্তির মা ও বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র ভুয়ো। সেটাও পুরসভা থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে কলকাতার রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসে। এই ব্যাপারে পুরসভার চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ‘পাসপোর্ট আবেদনের নথিপত্র যাচাইয়ের দুই ব্যক্তির নিজস্ব এবং পরিবারের নথিপত্রের কোনও রেকর্ড মাল পুরসভায় নেই, সেটাই লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হয়েছে।’

মুম্বই পুলিশের তরফে একটি জন্মের শংসাপত্র যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল মাল পুরসভায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগে। মুম্বই পুলিশের এমআরএ মার্গ পুলিশ স্টেশন থেকে ওই চিঠিটি ই-মেল মারফত পুরসভায় এসেছিল। পুলিশ যে জন্মের শংসাপত্র যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে সেই ব্যক্তির নাম হাবিবুল্লা মোহাম্মদ খুশল। শংসাপত্র অনুযায়ী তার জন্ম জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার শহরে এবং জন্ম হয়েছে ১৯৮২ সালে। যদিও তার স্থায়ী ঠিকানা লেখা রয়েছে মেটেলি বাজার। সন্দেহ ছিল সেখানেই। আগেই ওই শংসাপত্রের বৈধতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পুরসভার আধিকারিকরা।

১৯৮৯ সালে মাল পুরসভা গঠন হলেও জন্মের সাল দেওয়া রয়েছে ১৯৮২। সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী জন্মের ২১ দিনের মধ্যে জন্মের শংসাপত্র গ্রহণ না করলে মহকুমা শাসক অথবা এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের একটি লিখিত হলফনামা জমা করতে হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগে। পাশাপাশি জন্মের প্রমাণস্বরূপ অন্ততপক্ষে দুজন স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির স্বঘোষিত বয়ান জমা দিতে হয় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগে। প্রয়োজন হয় পরিবারের অন্যান্যদের যাবতীয় সরকারি নথিপত্র। জন্ম-মৃত্যুর পোর্টালে হাবিবুল্লাহ মহম্মদ খুশলের সমস্ত বিবরণ দেওয়া থাকলেও জন্ম-মৃত্যু পোর্টালে আপলোড করা সমস্ত নথিপত্রই ভুয়ো বলে জানিয়েছেন পুরসভার আধিকারিকরা। সেই নথিপত্র যাচাইয়ের পর জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবেই জন্মের শংসাপত্র ইস্যু হয়েছে মাল পুরসভা থেকে। বিতর্ক তৈরি হয়েছে শংসাপত্র ইস্যুর তারিখ নিয়েও। গত বছর ৫ অক্টোবর জন্মের শংসাপত্র ইস্যু করেছিল মাল পুরসভা, সে সময়ে জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধীকরণ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন পুরসভার কর্মী প্রসেনজিৎ দত্ত। বিভিন্ন জাল নথিপত্র ব্যবহার করে এর আগেও মাল পুরসভা থেকে ১১টি জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র ইস্যু হয়েছিল, যার সবক’টি ব্যবহার করা হয়েছিল আফগান নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য। সেই ঘটনাতেও যোগসূত্র পাওয়া যায় মেটালি বাজারে এক পরিবারের। সেই শংসাপত্র ইস্যু করার দায় পড়েছিল প্রসেনজিৎ দত্তের ওপরেই।

সম্প্রতি কলকাতা রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস থেকে মহম্মদ হাসান বলে জনৈক ব্যক্তির নথিপত্রের বিবরণ চেয়ে পাঠানো হয় পুরসভার কাছে। ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরির আবেদন করেছিলেন মহম্মদ হাসান। সেই আবেদনের সঙ্গে তিনি জমা করেছিলেন তাঁর পিতা আবুল হাসান এবং মাতা আমিনা বিবির মৃত্যুর শংসাপত্র। আবুল হাসানের মৃত্যুর শংসাপত্র মাল পুরসভা থেকে ইস্যু করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১ জুলাই এবং আমিনা বিবির মৃত্যুর শংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর। উভয়ক্ষেত্রেই মৃত্যুর স্থান দেখানো হয়েছে মালবাজার মহকুমা হাসপাতাল। যদিও পুরসভা লিখিতভাবে পাসপোর্ট অফিসকে জানিয়েছে, এই দুটো শংসাপত্রের একটিও বৈধ নয় এবং একটিরও সরকারি রেকর্ড পুরসভায় নেই। মহম্মদ হাসান তাঁর মা ও বাবার মৃত্যুর ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। সেইসঙ্গে মহম্মদ হাসান নিজের যে জন্মের শংসাপত্র দিয়েছেন সেটাও মালবাজার পুরসভা থেকে ২০২৩ সালে ইস্যু করা‌। সেটাও অবৈধভাবে করা হয়েছে বলে স্পষ্ট হয়েছে।

সম্প্রতি চা বাগানের শ্রমিকদের জন্ম–মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ‘ডেথ ক্লেম’ করার ঘটনাও ঘটেছে। সেই ঘটনায় সরাসরি যোগ পাওয়া গিয়েছিল মাল পুরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগের। বীরপাড়া ডিমডিমা চা বাগানের এক শ্রমিকের জীবিত অবস্থায় ‘ডেথ ক্লেমের’ কাগজপত্র চা বাগানে পৌঁছালে হইচই পড়ে যায়। পরবর্তীতে সেই শ্রমিক বীরপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সমস্ত ঘটনার মূল অভিযুক্ত প্রসেনজিৎ দত্ত এখনও ফেরার। পুলিশ এখনও খোঁজ পায়নি তাঁর।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *