অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: চারদিন ধরে অভিভাবকহীন মাল পুরসভা (Mal Municipality)। আসছেন না চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি। ভাইস চেয়ারম্যানের পদও খালি। ফলে কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ। এর মধ্যেই কাটমানি বিতর্কে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ এসে পৌঁছাল মালের মহকুমা শাসকের দপ্তরে। এ বিষয়ে মহকুমা শাসক শুভম কুন্ডল বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে নিরপেক্ষ তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’
চেয়ারম্যানের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের অস্ত্রোপচার হওয়ায় তিনি কলকাতায় গিয়েছেন। যে কারণে তিনি পুরসভায় আসছেন না। তবে ফোনে যোগাযোগ রাখছেন অন্যান্য কাউন্সিলার এবং আধিকারিকদের সঙ্গে। চেয়ারম্যান বলেন, ‘তদন্তের জন্য যেখানে যখন ডাকা হবে, আমি হাজির থাকব। অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
সরকারি কাজ করে সম্পূর্ণ বিল পাননি ঠিকাদার। বিল পেতে হন্যে হয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা শিবরতন আগরওয়াল। তাঁর অভিযোগ, বিলের জন্য কাটমানি চেয়েছেন মাল পুরসভার চেয়ারম্যান। শুধু চেয়ারম্যান নয়, অভিযোগ পুরসভার অর্থ আধিকারিক মিঠুন দাসের বিরুদ্ধেও। শিবরতন বলেন, ‘বেআইনি অর্থ দাবি করেছেন চেয়ারম্যান। এত বছর ধরে ন্যায্য বিলের জন্য ঘুরতে হচ্ছে। তারপর কাটমানি দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।’
গত ২৭ জুন জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও নগরোন্নয়ন বিভাগের বিশেষ সচিবের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান শিবরতন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) পুষ্পক রায় মালের মহকুমা শাসককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শিবরতনকেও একবার তলব করে সমস্ত অভিযোগ শোনেন তিনি।
যদিও কাটমানি দাবির তত্ত্ব খারিজ করেছেন উৎপল। তাঁর দাবি, কাজের ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া আর কোনও তথ্য পুরসভার কাছে নেই। এমনকি তিনি এ-ও জানান, ওই কাজের প্রশাসনিক অনুমোদন ও অর্থ বিভাগের কোনও অনুমতি ছিল না। টেন্ডার প্রক্রিয়াও হয়নি। সম্পূর্ণ কাজ বেআইনিভাবে হয়েছে।
পুরসভার কর্মীদের একাংশের দাবি, কাটমানি তদন্ত হলে, বিনা টেন্ডারে কাজ করার বিষয়টিও তদন্ত করা উচিত প্রশাসনের। দ্বিতীয় শুনানির পর সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, মামলাকারীকে পুরসভায় ডেকে আলোচনা করতে হবে এবং সেই আলোচনায় কী সমাধান উঠে আসল, সেটা জানাতে হবে আদালতে। মামলাকারীর আইনজীবী সুমন শিকদার বলেন, ‘প্রত্যেক কাউন্সিলার ও চেয়ারম্যানের সম্পত্তির হলফনামা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত।’
গত ১৭ জুন চেয়ারম্যানের কক্ষে শিবরতন ও তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলার পুলিন গোলদার, নারায়ণ দাস, মণিকা সাহা সহ অর্থ আধিকারিক মিঠুন দাস ও নির্বাহী আধিকারিক চন্দ্রশেখর দাস। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ জুনের মধ্যে শিবরতনকে বাকি ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। অভিযোগ, তার পরেও টাকা পাননি শিবরতন।