অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: ঠিকাদারের বকেয়া বিল মেটানোর মামলায় পুরসভার (Mal Municipality) বর্তমান চেয়ারম্যানকে মামলার অংশীদার করতেই নড়েচড়ে বসল পুর কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির আগেই বুধবার মামলাকারী ঠিকাদার স্বপন ভৌমিকের অ্যাকাউন্টে জমা হল প্রায় সাত লক্ষ টাকা। যদিও এটা ছিল বকেয়া বিলের দ্বিতীয় কিস্তি। দুই কিস্তিতে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা পুরসভা মেটালেও বাকি টাকা কতদিনের মধ্যে মেটাবে সেটা আদালতে জানায়নি পুরসভা। বর্তমান চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়িকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলেও ১৫ মে শুনানিতে আদালতে হাজির হননি চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে, পুনরায় চেয়ারম্যানকে নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। পরবর্তী শুনানির আগেই পুরসভাকে বাকি টাকা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মামলাকারীর আইনজীবী সুমন সাহা বলেন, ‘শুনানির আগেই কিছু টাকা দিয়েছে পুরসভা। পরবর্তী শুনানির আগেই সম্পূর্ণ বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’
প্রায় নয় বছর আগে মাল পুরসভায় স্বপন সাহা চেয়ারম্যান থাকাকালীন একটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বরাত পেয়েছিলেন স্থানীয় ঠিকাদার স্বপন ভৌমিক। বরাত পাওয়া কাজটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে ২৫ লক্ষ ৬ হাজার ৯২৬ টাকার বিল পুরসভার কাছে জমা দিয়েছিলেন ঠিকাদার। অভিযোগ, বিলের টাকা মেটাতে গড়িমসি শুরু করে পুরসভা। বেশ কয়েকবার প্রাপ্য টাকা চেয়ে পুরসভাকে লিখিতভাবে আবেদন করেছিলেন ঠিকাদার স্বপন। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ সেই সময় তাঁর প্রাপ্য টাকা প্রদান করেনি। এরপর ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে পুরসভার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা রুজু করেন স্বপন। সেই সময় আদালত পুরসভাকে নির্দেশ দেয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। পুরসভা জানায়, তারা ১৭ লক্ষ টাকা কয়েকটি কিস্তিতে মেটাবে। কিন্তু তাতে রাজি হননি স্বপন। ২০২৪ সালে স্বপন পুনরায় হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। আদালত ৩১ তারিখের মধ্যে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া জন্য নির্দেশ দেয়। এরপরেই ২০২৪ সালের মে মাসের ৭ তারিখ মাল পুরসভা ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের ডিভিশন বেঞ্চে পালটা আপিল মামলা করে। যদিও পরবর্তীতে পুরসভার দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে দুই মাসের মধ্যে টাকা মেটানোর নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। দুই মাসের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধ না করতে পারায় আদালত অবমাননার দায়ে পড়ে মাল পুরসভা।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর পুরসভার তরফে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা স্বপনকে দেওয়া হয়। বকেয়া টাকা আদালতের নির্দেশ মেনে ২০২৫ সালের ৬ মার্চের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মাল পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বপন সাহা। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্চ মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় স্বপন সাহার বিরুদ্ধে রুল জারি করে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে চলতি মাসের ৩ তারিখ আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এরপর মার্চ মাসের ২৮ তারিখ স্বপন সাহা হাইকোর্টের কাছে একটি হলফনামা জমা দেন। পরবর্তীতে চলতি মাসের ১৩ তারিখে স্বপন ভৌমিকের অ্যাকাউন্টে পুরসভার তরফে দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। সঙ্গে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন সাহা। যদিও সেই আবেদন খারিজ করে আদালত। বর্তমান চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আইন মেনে করা হচ্ছে।’
তবে বিরোধীদের কটাক্ষ তৃণমূলের দিকেই। বিজেপির টাউন মণ্ডল সভাপতি নবীন সাহা বলেন, ‘যাঁর আমলে দুর্নীতি হয়েছে, তিনি তো এখন পার পাবেন না, আর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এখন মামলা থেকে পালাতে চাইছেন।’ সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘তৃণমূল পুরসভার কালচার নষ্ট করেছে, এটা আমাদের কাছেও লজ্জার।’