মালবাজার: আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার ডিমডিমা চা বাগানের কারখানায় কাজ করেন জয়পাল মাছুয়া। চা বাগানের শ্রমিক মহল্লার ৬ নম্বর লাইনে তাঁর বাড়ি। সম্প্রতি বাগানে সাময়িক অচলাবস্থা চললেও নিয়ম করে রোজ চা বাগানের ফ্যাক্টরিতে যান জয়পাল। ১৪ ই এপ্রিলও কাজে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেদিন বাগানের পিএফ বাবু জয়পালকে ডেকে একটি তালিকা দেখান। জানা যায়, পিএফ অফিস থেকে পাঠানো সেই তালিকায় জয়পালকে মৃত বলে দেখানো হয়েছে।এই প্রসঙ্গে পিএফ বাবু জয়পালকে জানান, কোনও অজ্ঞাত ব্যক্তি জয়পালকে মৃত দেখিয়ে তাঁর পিএফ-এর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। জীবিত জয়পালের মৃত্যুর যে শংসাপত্র পিএফ অফিসে দাখিল করা হয়েছে, সেটি সংগ্রহ করা হয়েছে মাল পুরসভা থেকে। গত বছরের আগস্টের ২৩ তারিখে সেই মৃত্যুর শংসাপত্র রেজিস্টার করা হয়েছে জন্ম মৃত্যুর পোর্টালে। জানা যায়, সেই সময় ওই বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন পুর কর্মী প্রসেনজিৎ দত্ত। পাশাপাশি যে আধার কার্ড পিএফ অফিসে জমা করা হয়েছে, সেখানে জয়পালের নাম থাকলেও তাঁর ছেলের নাম ভুল দেওয়া হয়েছে। জয়পালের দাবি আধার কার্ডটিও জাল। কারণ জয়পালের তিন ছেলের মধ্যে রাজেশ মাছুয়া বলে কেউ নেই। জয়পালের তিন ছেলে দীলকুমার, সর্বন, প্রহ্লাদ ও দুই মেয়ে দিপালী ও শেফালী। যে নথিপত্র পিএফ অফিসে জমা করা হয়েছে, সেখানে বাগানের তৎকালীন ম্যানেজারের যে সই ছিল, সেটাও জাল বলে জানা গিয়েছে। তৎকালীন ম্যানেজার রবীন্দ্র সিং বলেন, ‘আমার সই, স্ট্যাম্প জাল করে সেই কাগজপত্র পিএফ অফিসে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছু গোলমাল থাকায় সেটা যাচাই করতে বাগানে পাঠানো হয়। তখন বিষয়টি নজরে আছে।’
এদিকে জয়পাল-এর মৃত্যুর শংসাপত্র মাল পুরসভা থেকে কীভাবে দেওয়া হল সেই বিষয়টি নিয়ে ধন্দ্বে আছে জয়পালের পরিবার। এই প্রসঙ্গে জয়পাল বলেন, ‘রোদে জলে ভিজে কাজ করে ছেলে মেয়ের জন্য কিছু টাকা জমিয়ে রাখা ছিল। সেটা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে কিছু দালাল। আমার মৃত্যুর শংসাপত্র পর্যন্ত বের করে নিয়েছে তারা। জানিনা পুলিশ কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারবে।’
ওই বাগানের শ্রমিক নেতা বিরেন্দ্র সিং বলেন, ‘চা বাগানে প্রচুর দালাল এই সব জালিয়াতি কাজ করছে, তাদের চিহ্নিত করে পুলিশের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। না হলে গরীব মানুষগুলো ভাতে মারা যাবে।’ তবে এটাই প্রথম নয়। জানা গিয়েছে, এর আগেও জয়পাল মাছুয়ার মতোই আরও একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে হয়েছে এমন পিএফ জালিয়াতি।
অপরদিকে জয়পাল মাছুয়ার জাল মৃত্যু শংসাপত্র মাল পুরসভা থেকে যে কর্মীর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এর আগেও উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। এখনও গাঢাকা দিয়ে আছে সেই মূল অভিযুক্ত পুরকর্মী প্রসেনজিৎ দত্ত। মাল পুরসভার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগের দায়িত্ব ছিল প্রসেনজিতের ওপরে। পরবর্তীতে প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে পুরসভা থেকে জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে জানতে পারেন এই মাল পুরসভা থেকেই ১১ জন আফগান নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র বেআইনিভাবে দেওয়া হয়েছে। সেই ১১ টি শংসাপত্র ব্যবহার করে সেই আফগান নাগরিকরা ছয়টি পাসপোর্ট তৈরি করে। যে পাসপোর্টগুলো দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন দপ্তরের নজরে আসে। গোয়েন্দাদের তদন্তে মাল পুরসভার এই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বপন সাহা নিজেই পুর কর্মী প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন মালবাজার থানায়। তারপর থেকেই পলাতক সে। তবে সেই ঘটনার প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও হদিস পায়নি প্রসেনজিতের।