Mainaguri | মকবুলের নৈবেদ্য দিয়েই অষ্টমীর ভোগ পান মা

Mainaguri | মকবুলের নৈবেদ্য দিয়েই অষ্টমীর ভোগ পান মা

শিক্ষা
Spread the love


অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: অষ্টমী পুজোর ভোগের জন্য পায়েসের দুধ বা বলির চালকুমড়ো আসে তাঁর বাড়ি থেকেই৷ পুজোর ঘট ধোয়া বা ফুল-বেলপাতা সংগ্রহ সবেতেই তিনি। তিনি মকবুল হুসেন। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পুজোর জোগাড়ের কাজে অবিচ্ছেদ্য এক মানুষ। তাঁকে ছাড়া ময়নাগুড়ি ফুটবল ময়দানের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর কথা ভাবাই যায় না (Mainaguri)। বেলতলায় গোবর লেপে সাফ করা বা পুজোর জন্য পদ্ম ফুল-দূর্বা সহ অন্যান্য উপকরণ নিয়ে আসা, সবেতেই মকবুল। তাঁর কথায়, ‘যতদিন বেঁচে আছি এই পুজোর সঙ্গে আমি জড়িয়ে থাকব। আমার কাছে আল্লা আর ভগবানের কোনও পার্থক্য নেই।’ পুজোর উদ্যোক্তা  তাপস ভদ্র, অশোক দত্ত, শৈলেন রায়ের কথায়, প্রতি বছর পুজোর সময় আমরাও মকবুলকে ছাড়া অন্য কাউকে পুজোর কাজে ভাবতে পারি না।

দুর্গাবাড়ির পুজো ময়নাগুড়ি শহরের সব থেকে প্রাচীন পুজো৷ এবার ১৩৫তম বছরে পড়ল এই পুজো। জাঁকজমকহীন, কিন্তু ঐতিহ্যে আর উজাড় করা ভালোবাসার গন্ধ জড়িয়ে এখানে। মকবুলের নামও সেভাবেই জড়িয়ে গিয়েছে এই পুজোর সঙ্গে। ময়নাগুড়ি ফুটবল ময়দানের এক কোণে রয়েছে স্থায়ী ঠাকুরদালান। সেখানে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী বিকাশ রায়। তার পাশেই বেলতলা। পুজো এগিয়ে আসতেই মকবুলেরও দেখা মিলছে দুর্গাবাড়ি চত্বরেই। মন্দির পরিষ্কার করা, বেলতলার আগাছা সাফাইয়ের কাজও শুরু করেছেন মকবুল। ওই বেলতলাতেই মায়ের বোধন হয়। পুজোর আগে গোটা মন্দির চত্বর নিজের হাতেই পরিষ্কার করেন। তারপর পুজো শুরু হয়। পুরোহিতের নানান কাজেও সহযোগিতা করেন তিনি। পুজোর সামগ্রী জোগাড়ের দায়িত্বও তাঁর কাঁধেই। প্রায় ৩০ বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে এই পুজোয়। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ঝুলন দে বলেন, ‘যত দিন মকবুল এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান থাকবেন। আমরা কোনওদিনই ওঁকে বাধা দেব না।’

অষ্টমী পুজোর দিন মকবুলের বাড়ির গোরুর দুধ দিয়ে এই মণ্ডপে পুজো হয়। বলির চালকুমড়োও মকবুল বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। নবপত্রিকা স্নান করানো থেকে শুরু করে এভাবেই কেটে যায় গোটা পুজো। বিসর্জনের দিন নদীতে তলিয়ে যাওয়া ঠাকুরের মুখ প্রতিবার চোখ ভিজিয়ে দেয় মকবুলের। মনে মনে বলেন, আবার এসো মা।

বছর বাহান্নর মকবুলের বয়স তখন বড়জোর পনেরো। সেই সময় নিজেই এই পুজোর কাজে এগিয়ে এসেছিলেন। ময়নাগুড়ি টেকাটুলি কালীরহাট মোড় লাগোয়া গ্রামে মকবুলের ঘর। মণ্ডপ থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। সারাবছর কৃষিকাজ করলেও পুজোয় তা শিকেয় তুলে প্রতিদিন ভোরে মকবুল মণ্ডপে চলে আসেন। তারপর সারাদিন কেটে যায় সেখানেই।

ময়নাগুড়ি দুর্গাবাড়ির নাটমন্দিরে খড়ের ওপর এক মেটে-দো মেটে (মাটির প্রলেপ) করে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছেন দশভুজা। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মকবুল বলেন, ‘দুর্গাপুজোর কাজ করতে আনন্দই হয়। মা আর খোদার মধ্যে তো কোনও বিরোধ নেই। আমরা কেন নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরি বলুন তো?’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *