বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: প্রায় এক বছর আগে শহরকে আলোয় সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্পে টেন্ডার ডেকে সংশ্লিষ্ট কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেয় ময়নাগুড়ি পুরসভা (Mainaguri)। নির্মাণকাজও শুরু করে ঠিকাদারি সংস্থা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কাজ শুরু করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাকা রাস্তার ধারে মাটির নীচে কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে রাখা হয়েছে। সেটা বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়েও তোলপাড় হয়েছে। কাজ এভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় নানান প্রশ্ন উঠছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কাটমানি সেটিংয়ে গণ্ডগোল বেধেছে বলেই অনুমান। তাছাড়া কাজ বন্ধ হওয়ার কোনও কারণ নেই। সিপিএমের মধ্য পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক অপূর্ব রায় বলেন, ‘আগে এমন বহু নজির রয়েছে। ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির সব সামগ্রী পচে গিয়েছে। আগেই টাকা লোপাট হয়েছে। এক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই কোনও অশুভ যোগসাজশ কাজ করছে।’ বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক চঞ্চল সরকারের বক্তব্য, ‘আমাদের অনুমান, নিশ্চয়ই কাটমানি সেটিংয়ে গণ্ডগোল বেধেছে।’
যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্তদেব অধিকারী বলেন, ‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’ বিষয়টি নিয়ে পুরসভায় আলোচনা করেছেন বলে জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের ময়নাগুড়ি টাউন ব্লক সভাপতি গোবিন্দ পাল। তিনি বলেন, ‘কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।’
প্রধানত ময়নাগুড়ি বাজারকেন্দ্রিক কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও সার্ক রোড পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডকে নিয়েই ওই প্রকল্প তৈরি করা হয়। মোট পাঁচটি এলাকাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে একসঙ্গে টেন্ডার করা হয়েছে। তাতে মোট ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৯ হাজার ২৪ টাকা। প্রশ্ন উঠছে, শহরজুড়ে এভাবে কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে দীর্ঘসময় ধরে কেন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে? শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে সেই সিমেন্ট কংক্রিটের খুঁটি মাটি থেকে এক-দেড় ফুট বেরিয়ে রয়েছে। ময়নাগুড়ি নাগরিক চেতনার কার্যনির্বাহী সভাপতি অমল রায়ের কথায়, ‘উন্নয়নের কাজ মানেই জনগণের টাকা। কত টাকায় কী ধরনের কাজ করা হচ্ছে তা প্রকাশ্যে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেটা না হলে ধরে নিতে হবে সেই কাজে কোনও কারচুপি করা হচ্ছে। সন্দেহজনক হলেই জনরোষ তৈরি হবে।’
এই প্রকল্পে ব্যাংক মোড় থেকে খুকশিয়া মোড় ৪৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৯১৬ টাকা, নতুন বাজার ট্রাফিক মোড় থেকে হাসপাতালপাড়া ১২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০ টাকা এবং দুর্গাবাড়ি মোড় থেকে ইন্দিরা মোড়ে ২৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৮৭ টাকা ব্যয় হবে। একইভাবে মূল ট্রাফিক মোড় থেকে সিনেমা হল মোড়ে ১২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০ টাকা এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি থেকে পুরসভা অফিস হয়ে থানা মোড় পর্যন্ত ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ৬ লক্ষ ৪২ হাজার ৬২১ টাকা।
শহরজুড়ে রাস্তার ধারে কংক্রিটের খুঁটি নির্মাণ করে রাখা হয়েছে কয়েক মাস আগেই। বেশ কিছু সামগ্রী নিয়ে এসে রাখা হয়েছে পুরসভা অফিসের পাশে খেলার মাঠে। ঠিকাদারি সংস্থা বর্ধমানের। কেন কাজ করছেন না জানতে ঠিকাদার অহীন সামন্তকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই কাজ করে দেওয়া হবে।’