অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। ময়নাগুড়ির (Mainaguri) মেয়ে বছর ২২-এর সংঘমিত্রা রায় যেন তারই এক উদাহরণ। দিনে সিভিক ভলান্টিয়ারের ডিউটি ও রাতে মুদিখানার দোকান সামলে তিনি খেলার মাঠেও অপ্রতিরোধ্য। সম্প্রতি মালদায় আয়োজিত হওয়া নবম নেতাজি সুভাষ স্টেট গেমসে মহিলাদের ৬৩ কেজি পাওয়ার লিফটিং (Energy lifting) প্রতিযোগিতায় তিনি সোনা জিতেছেন। সংঘমিত্রার হাত ধরেই স্টেট গেমস-এ জলপাইগুড়ি জেলায় সোনার পদক এল। তিনি ময়নাগুড়ি ব্লকের মাধবডাঙ্গা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত দক্ষিণ ভুসকাডাঙ্গার বাসিন্দা। প্রতিযোগিতা শেষে বাড়ি ফেরার পর সংঘমিত্রার পরিবার থেকে গ্রামবাসী, এমনকি সহকর্মীরাও অত্যন্ত খুশি।
ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দপ্তরের সহযোগিতায় এবং বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গত ৭ এপ্রিল থেকে মালদায় স্টেট গেমস শুরু হয়েছিল। সেখানেই সংঘমিত্রা এই জয় পেয়েছেন। তবে শুধু এবার নয়, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি একের পর এক পদক জিতেছেন। আগামীদিনে ওই তরুণী দেশের হয়ে খেলতে চান। তাই তাঁর কথায়, ‘রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় পদক পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। তবে আগামীদিনে দেশের হয়ে খেলাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’
সংঘমিত্রার বাবা তুষারকান্তি রায় পেশায় কৃষক। বাবা, মা শিপ্রা রায় ও চার ভাইবোন মিলেই তাঁর পরিবার। অভাবের সংসারে পাওয়ার লিফটিং প্রশিক্ষণ, নিয়মিত অনুশীলন সহ খেলার পোশাক ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে প্রচুর খরচ।
অন্যদিকে, সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে পাওয়া বেতনের পুরোটাই সংসারে দিতে হয়। তাই পাওয়ার লিফটিংয়ের জন্য বাড়তি অর্থ জোগাতে সংঘমিত্রা বাড়ির সামনে মুদিখানা চালান। ডিউটি ও দোকানের ফাঁকে তিনি নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করেন। ময়নাগুড়ির এক সমাজকর্মী রামমোহন রায় সংঘমিত্রাকে সবসময় নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। তরুণীর মায়ের বক্তব্য, ‘আমার মেয়ে এত পরিশ্রম করে একের পর এক পদক জিতেছে। কিন্তু ওর লক্ষ্যের দিকে প্রধান অন্তরায় হল আর্থিক প্রতিবন্ধকতা।’ অন্যদিকে, সংঘমিত্রার সাফল্যে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশকর্মীরাও খুশি। সহকর্মীর এই সাফল্যে থানার আইসি সুবল ঘোষ বলেন, ‘সংঘমিত্রা আমাদের জেলার গর্ব। ওঁর অনুশীলনে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় আমরা সেব্যাপারে সবসময় নজর রাখি। আগামীদিনে আমরা সকলে সব সময় ওঁর পাশে থাকব।’