Mainaguri | উন্নয়নের কোপে শতাব্দীপ্রাচীন পঞ্চাশটি গাছ

Mainaguri | উন্নয়নের কোপে শতাব্দীপ্রাচীন পঞ্চাশটি গাছ

ব্লগ/BLOG
Spread the love


বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: ময়নাগুড়ি (Mainaguri) শহরের বুক চিরে গিয়েছে মালবাজার থেকে ময়নাগুড়ি হয়ে ধূপগুড়িগামী ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দু’পাশজুড়ে অন্তত ৫০টি বিশাল গাছ। প্রত্যেকটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। যেন বনবীথি। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে ময়নাগুড়ি শহরের এমন গর্বের সম্পদ কাটা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। তাহলে কেবল সবুজ উধাও হয়ে যাবে না, ঠিকানা হারাবে কয়েক হাজার শামুকখোল ও অন্যান্য পাখি।

ময়নাগুড়ির নতুন বাজার থেকে বিডিও মোড় পর্যন্ত সেই রাস্তা নাগরিক কোলাহলের মাঝেও যেন শান্তি আর স্নিগ্ধতার স্পর্শে ভরা। প্রখর রোদের মধ্যেও ছায়ায় ঢাকা গোটা পথটাই যেন বাতানুকূল। রাস্তার ধারে থাকা এই গাছগুলো পরিযায়ী পাখিদের বসবাসের ঠিকানা। কিন্তু তা আর কতদিন? কারণ, চালসা থেকে ময়নাগুড়ি বিডিও অফিস মোড় পর্যন্ত মোট ৩৭ কিলোমিটার সড়ক চওড়া করার জন্য ডিপিআর তৈরি করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

বিশাল বিশাল গাছের ডালপালা এখানে রাস্তাকে ঢেকে রেখেছে। রাস্তার দু’ধারে ঘন জনবসতি। কিন্তু সেই বসতবাড়িগুলি যেন শান্তির নীড়। এই রাস্তার পাশেই বাড়ি রেখা রায়ের। পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রেখা গাছ নিয়ে রীতিমতো আবেগপ্রবণ। বললেন, ‘আমার প্রায় ৭০ বছর বয়স। ছোট থেকেই এই গাছগুলি দেখছি। সড়ক সম্প্রসারণ করতে গেলে গাছগুলি কাটা হতে পারে শুনে খুব কষ্ট পেলাম।’

আরেক বাসিন্দা খুকু রায় দাসের কথায়, ‘এই গাছগুলি হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার। কর্তৃপক্ষের কাছে বিনম্র আবেদন, গাছগুলিকে বাঁচিয়ে উন্নয়নের কাজ করা হোক। এখানে অসংখ্য পাখির বসবাস।’ এমন আকুতি আরও অনেকেই প্রকাশ করেছেন। ময়নাগুড়ি রোড পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক নন্দু রায়ের কথায়, ‘সেসব গাছ কাটলে পাখিদের বাসস্থান ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। কয়েক হাজার পাখির ছানা রয়েছে ওখানে। ক্ষতি হবে পরিবেশেরও। গাছ না কেটে বিকল্প চিন্তাভাবনা করে উন্নয়নমূলক কাজ করা হোক।’

ঘটা করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। সরকারি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু কোনও গাছ কি আদৌ মহীরুহ হয়ে ওঠে? স্থানীয়রা এমন কিছু মনে করতে পারছেন না। ময়নাগুড়ি নাগরিক চেতনার সম্পাদক অপু রাউতের কথায়, ‘একটি গাছ মানে এখন দশটি প্রাণ। শহরে এমনিতেই গাছ নেই বললেই চলে। নতুন করে গাছ রোপণ করে বড় করে তোলাও সম্ভব হয়নি।’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন এবং ময়নাগুড়ি পুরসভা কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ইতিপূর্বে। রাস্তার মাপজোখও প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় আশ্বাস দিচ্ছেন, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে। সেই আলোচনায় আদৌ কি কোনও লাভ হবে? উত্তরবঙ্গের গবেষক তথা ইতিহাসবিদ গৌতম গুহরায় বলেন, ‘এই গাছগুলি একশো বছরেরও বেশি পুরোনো। আর কোথাও এমন গাছে ঢাকা রাস্তা আছে কি না, জানি না। এই গাছগুলি কোনওভাবে রক্ষা করা যায় না?’ এই প্রশ্ন তো ময়নাগুড়ির সকলেরই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *