বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: একেই জতুগৃহ বাজার। কোথা থেকে কার বিদ্যুতের সংযোগ গিয়েছে বোঝার উপায় নেই। তার উপর বাজারের ভেতরে বিদ্যুতের সব খুঁটিতে এলোমেলোভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে তার। অবিরাম বর্ষণে যে কোনও সময় শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাটি ময়নাগুড়ি শহরের পুরোনো বাজারের (Mainaguri)। পুর কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। যদিও এ বিষয়ে বিদ্যুৎ দপ্তরকে জানানো হয়েছে বলে ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় জানিয়েছেন।
এদিকে, ডব্লিউবিএসইডিসিএলের ময়নাগুড়ি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তথা স্টেশন ম্যানেজার আখতার সর্দার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরে কথাবার্তা হয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতির তরফেও সহযোগিতা করা হবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বর্ষার পরেই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’
পুরোনো বাজারে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০টি দোকানপাট রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে ময়নাগুড়ি থেকে ধূপগুড়িগামী ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে খেলার মাঠ মোড়ের ২০টি দোকান বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতভর হিমসিম খেতে হয়েছিল দমকলবাহিনীর কর্মীদের। সবমিলিয়ে ক্ষতি হয়েছিল দু’কোটি টাকারও বেশি। তারপরেও শহরে শর্টসার্কিট থেকে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
যেমন, ২০০০ সালের গোড়ার দিকে শহরের ট্রাফিক মোড় লাগোয়া রাধিকা লাইব্রেরি সংলগ্ন জাতীয় সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরও আগে ট্রাফিক মোড়ে বাসস্ট্যান্ড এবং বাজারের ভেতরে ময়নামাতা কালীবাড়ির সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। সেই সময় গভীর রাত না হওয়ায় দমকলকর্মীরা অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। কোনও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও বিদ্যুৎ লাইনের তার সেই একইভাবেই রয়েছে। ব্যবসায়ী সুকুমার সাহা বলেন, ‘এমনিতেই বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার নেই। তারপর যেভাবে বিদ্যুতের তার কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে তা যথেষ্ট ভীতিকর।’ বহুবার এই বিষয়ে লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন বলে জানালেন ময়নাগুড়ি নাগরিক চেতনার সম্পাদক অপু রাউত।
অনেক দোকানের ছাউনি ছুঁয়ে বিদ্যুতের তার গিয়েছে বিভিন্ন দিকে। ব্যবসায়ী রতন সাহার কথায়, ‘দোকানের উপর বিদ্যুতের খুঁটিতে বিপজ্জনকভাবে তার ঝুলছে। কখন যে বিপদ ঘটে সেই আশঙ্কায় ঘুম হয় না রাতে। বাজারে বহুবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি পালটায়নি।’ ময়নাগুড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুমিত সাহার বক্তব্য, ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একাধিকবার বড়-ছোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ময়নাগুড়ি বাজারে। তা থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত প্রশাসনের।’ পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার এই দাবিতে সরব হয়েছেন। এখন দেখার বিদ্যুৎ দপ্তর কতদূর কী করে।