রায়গঞ্জঃ জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে কিশোরী কোয়েল বর্মন। সংগ্রাম, অধ্যবসায় আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে যাবতীয় প্রতিকূলতা। কোয়েল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। এতে ভীষণ খুশি জটিল সেলিব্রাল পলসি রোগে আক্রান্ত মেয়েটি। এমনকি স্কুলের মধ্যে তার ফল সবচেয়ে সেরা। তার শুধুমাত্র ডান পা সচল এবং বাকি সমস্ত অঙ্গ অসাড়। সেই প্রতিবন্ধকতার বাধা পেরিয়ে কোয়েল দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনও বাধাই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
রায়গঞ্জের নিউ উকিলপাড়ায় হাই রোডের ধারে এক চিলতে ঘর কোয়েলদের। কোয়েলের বাবা, মধুসূদন বর্মন, প্রয়াত হয়েছেন পাঁচ বছর আগে। সংসারের হাল ধরেছেন মা ভারতী বর্মন। যিনি বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার সীমিত উপার্জনেই চলে কোয়েলের পড়াশোনা। ছোট থেকেই কোয়েল হুইলচেয়ারে চলাফেরা করে। যেদিন পারি স্কুলে পাঠাতাম। গৃহশিক্ষকরাও ওকে প্রচুর সহয়তা করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ওকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।’
এবারের মাধ্যমিকে কোয়েলের প্রাপ্ত নম্বর ৩৮৮ নম্বর। বাংলা ও ইংরেজীতে পেয়েছে ৬০, অঙ্কে ৫২, দুই বিজ্ঞানে ৪৯ করে, ইতিহাসে ৫১ এবং ভূগোলে ৬৭ নম্বর। আগামী দিনে কলা বিভাগে ভর্তি হতে চায় সে।
সৎসঙ্গ গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী কোয়েল স্কুলে নিয়মিত যেত, পড়াশোনায় বরাবরই ভালো। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে সবসময় সাহায্য করেছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনুরাধা সেন বলেন, ‘কোয়েল আমাদের স্কুলের গর্ব। ওর লড়াই সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা ওর পাশে সবসময় আছি।’
আগামী দিনে সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখে কোয়েল। তার কথায়, ‘আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মায়ের পাশে থাকতে চাই।’ মা-ই কোয়েলের প্রেরণা। কিন্তু কীভাবে উচ্চ শিক্ষায় আর্থিক সহায়তা জুটবে, সে নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তার মা ভারতী দেবী।
এই অবস্থায় উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রতিবন্ধী সমিতির সম্পাদক গৌর সরকার বলেন, ‘ও মাটিতে শুয়ে শুয়ে লেখার চেষ্টা করত। জেলা প্রশাসন ওর সরকারি স্কলারশিপ এবং হুইল চেয়ার সহ সবরকম সুবিধা দিয়েছে। আশা করছি, ওর মধ্যে থাকা বিশেষ গুণগুলো আগামী দিনে সামনে আসবে।’
কোয়েলের এই অদম্য লড়াই শুধু তার নিজের নয়, বরং সমাজের কাছে এক দৃষ্টান্ত। সাহস আর অধ্যবসায়ের গল্প লিখছে সে, যা আগামী দিনে আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।