সৌরভ ঘোষ, মালদা: ১৫০ বছর পেরিয়েছে বহুদিন আগেই। একসময় দিকপাল কৃতীরা আজও জেলা এবং জেলার বাইরে সুমান কুড়িয়ে যাচ্ছেন। একসময় প্রতি বছর এই স্কুলের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় নাম থাকত। তবে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জেলার বিভিন্ন স্কুলের ফলাফলের মধ্যে যখন কিছু প্রতিষ্ঠান নজর কাড়ছে অসাধারণ পারফরম্যান্সে, ঠিক তখনই শহরের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বার্লো বালিকা বিদ্যালয় চমকহীন ফলাফলে আলোচনায়।
বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২২১ জন, যার মধ্যে ২১৯ জন পাশ করলেও প্রত্যাশিতভাবে উজ্জ্বল ফলের সংখ্যা ছিল কম। সর্বোচ্চ নম্বর ৬৬৯ হলেও, সামগ্রিকভাবে ফলাফলকে অনেকেই ‘হতাশাজনক’ বলেই মনে করছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার এপ্রসঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘গত কয়েকবছর ধরে বিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন টেস্ট উঠে গিয়েছে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী ছাত্রীদের ভর্তি নিতে হয়। ফলে স্বাভাবিক অর্থে মেধাবী ছাত্রীদের বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না।’
এই নিয়মের ফলে বিদ্যালয় যেসব মেধাবী ছাত্রীদের নিয়ে অতীতে রাজ্য পর্যায়ে নাম করেছিল, সেই প্রবণতা অনেকটাই স্তিমিত হয়েছে বলে মনে করছেন অভিভাবক এবং শিক্ষক মহল। দীপশ্রী মজুমদার জানান, ‘শুধু পাশ করানোই লক্ষ্য নয়, ছাত্রীর সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হয় অ্যাকাডেমিক মনোভাবসম্পন্ন পড়ুয়া। কিন্তু ভৌগোলিক এক্তিয়ারের কারণে সেই সুযোগ সীমিত।’
অভিভাবকদের একাংশও প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্যের সঙ্গে একমত। অভিভাবক পার্থ গুহর দাবি, ‘সরকারি নীতির পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন, যাতে বিদ্যালয়গুলি তাদের নিজস্ব যোগ্যতা ও ঐতিহ্য বজায় রেখে উপযুক্ত ছাত্রী বেছে নিতে পারে।’
একইসঙ্গে আরেক অভিভাবক বর্ণালি দত্ত মনে করছেন, ‘পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিদ্যালয়কেও বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে যেমন বাড়তি কোচিং, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম কিংবা অভিভাবক ও ছাত্রীর মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা।’
বার্লো বালিকা বিদ্যালয়ের ফলাফল যে একেবারে খারাপ তা নয়, তবে এর ঐতিহ্য ও গৌরবের সঙ্গে তুলনা করলে সাফল্যের গভীরতা এবার কিছুটা ফিকে বলেই প্রতীয়মান। তাই ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠান কীভাবে তার হারানো ধার ফিরিয়ে আনবে, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা শহর।