কালিয়াগঞ্জ: ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে তার কোন আসক্তি নেই। ডিজিটাল যুগের ছেলে হয়েও নিয়মিত গীতা পাঠ করে সে ৷ প্রতিদিন ১ ঘন্টা ধ্যান তার রোজকার রুটিন মধ্যে পড়ে ৷ আগামী দিনে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় এ বছর মাধ্যমিকে (Madhyamik 2024) যুগ্মভাবে নবম স্থানাধীকারী মৃণয় বসাক। তাঁর কথায়, ‘সংযম, অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রমের কোন বিকল্প হয় না।’
কালিয়াগঞ্জের (Kaliyaganj) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকলোনী পাড়ার বাসিন্দা মৃণয়। এ বছর মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭। মৃণয় জানায়, বাংলায় ৯৭, ইংরেজি ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, অঙ্কে ১০০, ভূগোলে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৮ এবং ইতিহাসে ৯৯ পেয়েছে সে। ছয়জন গৃহশিক্ষক ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ১৪ ঘন্টা পড়াশোনা করত। বিকালে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলা ছিল নিত্য দিনের অভ্যেস। বিরিয়ানি, পোলাও, মাংস নয়, মায়ের হাতে তৈরি মুড়িঘন্ট সবচেয়ে প্রিয় মৃণয়ের। বিশ্ব জগতের সঙ্গে পরিচয় ও পরবর্তীতে গবেষণা করতে এখন থেকেই জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান বিষয়কে বেছে নিয়েছে সে।
বাবা, মা, ছোট বোন মৃত্তিকাকে নিয়ে মৃণয়ের সংসার৷ বাবা মৃত্যুঞ্জয় বসাক মালগাঁওয়ে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মৃত্যুঞ্জয় বাবু আনন্দের সঙ্গে জানালেন, ‘ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের মৃণয়৷ কোনদিন পড়তে বসতে বলতে হয়নি তাকে। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত গৃহশিক্ষক ছাড়াই আমি মৃণয়কে পড়িয়েছি। মাধ্যমিকে ছয়জন গৃহশিক্ষকের কাছে সে পড়ত।’
বাড়িতে ১৪ ঘন্টা পড়াশোনা করা ছেলের রুটিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হত মৃণয়ের মাকে। আজকের ফলাফলে সমস্ত পরিশ্রম সার্থক বলে জানালেন মনি বসাক। মনি দেবী বলেন, ‘গভীর রাত পর্যন্ত কখন পড়েনি মৃণয়। ভোরে উঠে পড়তে বসত সে। অনেক সময় পড়ার টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ত।’ আজ কি তবে ছেলের প্রিয় মুড়িঘন্ট রান্না করে খাওয়াবেন? হাসিমুখে মনি দেবীর জানান, ‘আজ না পারলেও পরে অবশ্যই খাওয়াব।’
পঞ্চম শ্রেণি থেকে কালিয়াগঞ্জ সরলা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল মৃণয়। আগামীতে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে এই স্কুলেই লেখাপড়া চালিয়ে যাবে সে। সরলা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার দত্তের বক্তব্য, ‘মেধাবী, পরিশ্রমী ছাত্র হিসাবে বরাবর স্কুল শিক্ষকদের সু-নজরে ছিল মৃণয়। সে মাধ্যমিকের ফলাফলে রাজ্যে নবম স্থান অর্জন করে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সে এই স্কুলেই লেখাপড়া চালিয়ে গেলে বাকি ছাত্রদের সে পথ দেখাতে পারবে।’