আসানসোলঃ ২০ বছর ধরে চলা একটি খুনের মামলায় সাজা ঘোষণা করল আসানসোল আদালত। খুনের ঘটনায় মোটে ৬জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পেল একজনই। বাকি ৫ জনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত মৃতার শ্বশুরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা শুনিয়েছে আদালত।
জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালের ১০ মে জামুড়িয়া থানার কুলডাঙ্গার বাসিন্দা টুম্পা ঘোষের সঙ্গে চুরুলিয়ার হারাধন ঘোড়ুইয়ের বিয়ে হয়েছিল সামাজিকভাবেই। বিয়ের সময় যথাসম্ভব পন, সোনা গয়না দিয়ে বিয়ে দেওয়া হলেও তাতে মন ভরেনি টুম্পার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের। বিয়ের পর থেকেই বাপের বাড়ি থেকে পন হিসেবে আরও টাকা, গয়না ও মোটরবাইক আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এমনকী মৃতার স্বামী হারাধন ঘোড়ুই শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় শ্বশুর শংকর ঘোড়ুই তাকে কুপ্রস্তাবও দিত বলে অভিযোগ ছিল। শ্বশুর বাড়িতে টুম্পার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতো শ্বশুর শংকর। বিয়ের মাত্র তিনমাসের মধ্যেই ১৩ অগাস্ট রাতে শ্বশুর শংকর ঘোড়ুইয়ের ঘরের বাথরুমের ভেতর থেকে টুম্পার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলায় কাটা দাগ ছিল। ঘটনার পরের দিন মৃতার বাবা মঙ্গল ঘোষ জামুড়িয়া থানায় স্বামী, শ্বশুর সহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। দীর্ঘ ২০ বছর মামলা চলার পর গতকাল অর্থাৎ সোমবার মৃতার শ্বশুর শংকর ঘোড়ুইকে দোষী সাব্যস্ত করে আসানসোল আদালত। অভিযুক্ত বাকি ৫ জনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণের অভাবে স্বামী হারাধন ঘোড়ুই, উত্তম ঘোড়ুই, মকর ঘোড়ুই, রেখা ঘোড়ুই ও চিন্তা ঘোড়ুইকে বেকসুর খালাস করে দেন বিচারক। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই এতদিন জামিনে মুক্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত শ্বশুরকে সাজা শোনান ফাস্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারক মহুয়া রায় বাসু। শঙ্কর ঘোড়ুইকে তার পুত্রবধূ টুম্পা ঘোষ ঘোড়ুইকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তার ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় এদিন তার সওয়ালে দোষী সাব্যস্তকে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে ফাঁসি দেওয়ার আবেদন করেন। তিনি বিচারকের সামনে বলেন, এটি একটি নৃশংস ঘটনা। মাত্র ২০ বছরের একটি মেয়ে জীবনকে ভালো করে বুঝে উঠার আগেই খুন হতে হল। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্টের বেশি কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। এরপর বিচারক শংকর ঘোড়ুইয়ের কাছে জানতে চান, তার পরিবারে কে কে আছেন? তার উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মুক ও বধির। স্ত্রী আছেন। আমি পেনশন পাই। আমার বড় কিছু হলে, ওরা সবাই ভেসে যাবে। এরপরে বিচারক সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।’
এদিন আদালতে মৃতার বাপের বাড়ির লোকেরা হাজির ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তারা মুল অভিযুক্ত হিসেবে শ্বশুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় খুশি হয়েছেন। বিশেষ করে, তারা সরকারি আইনজীবীর সওয়াল-জবাবে সন্তোষ প্রকাশ করেন।