শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি : এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জ্বলতে থাকা ডুয়ার্সের বনাঞ্চলে বনসম্পদ ও বন্যপ্রাণের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবারও লাটাগুড়ি ও গরুমারার জঙ্গলের বেশ কিছু স্থানে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বন দপ্তরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে। তবে তার আগেই জঙ্গলের বহু ভেষজ গাছ সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। কীটপতঙ্গ ও পাখির বাচ্চা ও বিশেষ করে ময়ূরের ডিমের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রত্যেক রেঞ্জ অফিসারকে রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের উত্তর মণ্ডলের মুখ্য বনপাল শ্যামকুমার মোলে জানান, সব রেঞ্জ অফিসারকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোটা শীতকালের পর বসন্ত শেষেও সেভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি ডুয়ার্সে। এদিকে ডুয়ার্সের গরুমারা, জলপাইগুড়ি ও বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের একাধিক জঙ্গলে প্রায় প্রতিদিন আগুন লাগছে। বন দপ্তর সূত্রে খবর, আগুনে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল। তারপর ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়ি বন বিভাগের চালসা রেঞ্জ ও লাটাগুড়ি জঙ্গলের। গরুমারা জাতীয় উদ্যানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে জঙ্গলের ছোট গাছের ক্ষতি তো হয়েছেই। সেই সঙ্গে কীটপতঙ্গ, পাখির শাবকরাও আগুনের শিকার হয়েছে বলে আশঙ্কা। তবে বন দপ্তরের সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দঁাড়িয়েছে, ময়ূর ও বনমুরগির ডিমের ক্ষতি। এই সময় মাটিতে গর্ত খুঁড়ে ডিম পারে তারা। আগুনে সেই ডিমের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বনকর্মীদের একাংশই জানিয়েছেন, লাটাগুড়ি ও বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে হাতিশুঁড়া, বনতুলসী, কেমুক, অশ্বগন্ধার মতো বিভিন্ন ভেষজ গাছ রয়েছে প্রচুর সংখ্যায়। আগুনে এই সমস্ত গাছের অনেকটাই একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিশিষ্ট পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু বলেন, আগুনে যেমন গাছগাছালি ও ছোট-বড় বন্যপ্রাণীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই গোটা এলাকা দূষণের শিকার হয়। আগামীদিনে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।’
মঙ্গলবারও লাটাগুড়ি ও গরুমারার জঙ্গলে একাধিক জায়গায় আগুন লাগে। ঘটনার খবর পেয়ে বন দপ্তরের লাটাগুড়ি রেঞ্জের বিট অফিসার সুজিত লেপচা ও ক্রান্তি পুলিশের ট্যুরিস্ট বন্ধু এএসআই সুরজিৎ মল্লিকের নেতৃত্বে বনকর্মী ও পুলিশকর্মীরা ফায়ার ব্লোয়ার দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণী বিভাগের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলি টিম গঠন করা হচ্ছে। বনকর্মীদের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।