উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল নারীদের জন্য চালু হওয়া ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। একটি সাম্প্রতিক অডিট রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ১৪,২৯৮ জন পুরুষও অনৈতিকভাবে নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তর (WCD) দ্বারা পরিচালিত এই প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সূত্রের খবর, এই দুর্নীতির ফলে রাজ্যের কোষাগারের প্রায় ২১.৪৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
গত বছর চালু হওয়া এই প্রকল্পের দরুন, ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যে সকল নারীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার কম, তাঁদের প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এর সূচনা হয়। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পটি বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায্যুতি জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
প্রকল্পটি চালু হওয়ার প্রায় ১০ মাস পর নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তর (WCD)-এর অডিটে এই দুর্নীতি ধরা পড়ে। রিপোর্টে বলা হয়, বহু পুরুষ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে কারসাজি করে নিজেদেরকে মহিলা সুবিধাভোগী হিসেবে প্রকল্পে নথিভুক্ত করে। উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “লড়কি বহিন প্রকল্প দরিদ্র মহিলাদের সাহায্য করার জন্য চালু করা হয়েছিল। পুরুষদের এর সুবিধাভোগী হওয়ার কোনও যুক্তি নেই। আমরা তাদের দেওয়া টাকা পুনরুদ্ধার করব। যদি তারা সহযোগিতা না করে, তাহলে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রকল্পে পুরুষদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়াও, নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তর-এর এই রিপোর্টে প্রকল্পের প্রথম বছরে আনুমানিক ১,৬৪০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় দুর্নীতি দেখা গেছে ৭.৯৭ লক্ষেরও বেশি মহিলার ক্ষেত্রে, যারা একই পরিবার থেকে তৃতীয় সদস্য হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন। অথচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী একটি পরিবারের সর্বোচ্চ দুজন মহিলা এর সুবিধাভোগী হতে পারেন। এই কারণে প্রায় ১,১৯৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও ২.৮৭ লক্ষেরও বেশি ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করার বয়সসীমা ৬৫ বছর। এর ফলে রাজ্যের প্রায় ৪৩১.৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর পাশাপাশি ১.৬২ লক্ষ মহিলাও এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীর তালিকায় ছিলেন যাদের পরিবারে চার চাকার গাড়ি আছে। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, এই ধরনের পরিবার আর্থিক সহায়তার যোগ্য নয়।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই বৃহত্তর তদন্তের দাবি উঠেছে। এনসিপি (NCP) সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে এই ঘটনাকে “বড় ষড়যন্ত্র” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এই পুরুষরা কীভাবে ফর্ম পূরণ করল? কে তাদের সাহায্য করল? কোন কোম্পানিকে রেজিস্ট্রেশনের চুক্তি দেওয়া হয়েছিল? এর পেছনে একটি বড় ষড়যন্ত্র আছে। বিষয়টি সিট বা ইডি দ্বারা তদন্ত করা উচিত।”
অপরদিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ প্রকল্পের একটি ব্যাপক পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী অদিতি তাতকারে প্রকাশ্যে সংশোধনী পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যে, ৫ লক্ষ অযোগ্য সুবিধাভোগীর নাম সিস্টেম থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে, অদিতি তাতকারের বক্তব্য, “নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তর সমস্ত সরকারি বিভাগ থেকে সমস্ত আবেদনের যোগ্যতা যাচাই করার জন্য তথ্য চেয়েছিল। সেই অনুযায়ী তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে যে, প্রায় ২৬.৩৪ লক্ষ সুবিধাভোগী অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করছিলেন। দেখা গেছে যে, কিছু সুবিধাভোগী একাধিক প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছিলেন, কিছু পরিবারে দুইজনের বেশি সুবিধাভোগী ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে, ২০২৫ সালের জুন মাস থেকে এই ২৬.৩৪ লক্ষ আবেদনকারীর সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রকল্পের প্রায় ২.২৫ কোটি যোগ্য সুবিধাভোগীকে ২০২৫ সালের জুন মাসের টাকা বিতরণ করা হয়েছে।”