সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: ‘পিরিতি কাঁঠালের আঁঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না!’
প্রেমের টানে প্রায় দেড় মাস আগে বাড়ি থেকে আটশো কিলোমিটার দূরে পাড়ি দিয়েছিল সপ্তম শ্রেণিতে পাঠরত এক নাবালিকা। সঙ্গে ছিলেন প্রেমিক। তিনি অবশ্য তরুণ। যদিও তাঁর বয়স মাত্র কুড়ি বছর। বুধবার ওডিশার ঢ্যানকানাল জেলা থেকে দুজনকে উদ্ধার করে কুশমণ্ডি থানার পুলিশ (Kushmandi)। শুক্রবার গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে চাইল্ডলাইন মারফত নাবালিকাকে হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃত তরুণকে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। অবশেষে মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা-মা।
এক বছর আগের কথা। প্রতিবেশী তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এক নাবালিকা। যদিও বয়স কম হওয়ায় প্রকাশ্যে মেলামেশা দুজনের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। তাই তাদের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছিল মোবাইল ফোন। এখন নাবালিকার বাবার আক্ষেপ, পড়াশোনার সুবিধার্থে মেয়ে তাঁর কাছে ফোন কেনার বায়না ধরেছিল। তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি মেয়ের কাছে মোবাইলটি ছিল কেবল সম্পর্ক বজায় রাখার একমাত্র অবলম্বন।
অর্থনৈতিক দিক থেকে দুই পরিবারই দুঃস্থ। নাবালিকার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। অভাবের সংসার। কষ্ট হলেও মেয়ের পড়াশোনা যেন কোনওভাবেই বন্ধ না হয়, সেটাই চেয়েছিলেন বাবা। মোবাইল কিনে দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘মেয়ে বলেছিল জামাকাপড় কিচ্ছু চাই না। শুধু একটা মোবাইল দাও। মোবাইল থাকলে টিউশন দরকার হয় না। মোবাইলেই সব উত্তর পাওয়া যায়। তাই মোবাইল কিনে দিয়েছিলাম।’
ধৃত তরুণের পরিবারেও ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা। অভাবের জেরে মাঝপথেই তিনি পড়াশোনা বন্ধ করে কাজ শুরু করে দেন। পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কিছুদিন ভিনরাজ্যেও ছিলেন। তবে ফোনে নাবালিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন। এরপর তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। ৩ অগাস্ট ওই তরুণের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে ওডিশা চলে যায় নাবালিকা। তরুণ সেখানে এক ঠিকাদার মারফত কাজের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।
এদিকে বাড়ি ফিরছে না দেখে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা। তবে দুজনের ফোন বন্ধ থাকায় পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে নাবালিকার বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রেমের কথা পুলিশ জানতে পারে। তরুণের পরিবারও ছেলের বাইরে কাজ করতে যাওয়ার বিষয়টি গোপন রেখেছিল বলে অভিযোগ।
তবে এক মাস পর মোবাইল খুলতেই পুলিশ জানতে পেরে যায় দুজনের অবস্থান। এরপর ঢ্যানকানাল জেলায় গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। কুশমণ্ডি থানার আইসি তরুণ সাহার দাবি, ‘গত এক বছরে এলাকা থেকে যতজন নাবালিকা প্রেমের টানে ঘরছাড়া হয়েছে, তাদের মধ্যে নব্বই শতাংশকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’