পারমিতা রায়, কার্সিয়াং: কথা হচ্ছে এক পাহাড়ি শহরের। সেখানে এই রোদ, এই কুয়াশা। শহরের মধ্য দিয়ে সোজা উঠে গেলেই ডাউহিল, গা ছমছমে আকর্ষণ। যাঁরা একটু ঘুরতে ভালোবাসেন, ইতিমধ্যেই নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন যে, কথা হচ্ছে কার্সিয়াংয়ের (Kurseong)। আর যাঁদের সেই পাহাড়ি শহরে ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁরা নিশ্চয় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন কার্সিয়াংয়ের পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি বা বাইক পার্কিংয়ের জায়গা খুঁজে পাওয়া কতখানি সমস্যার।
এই শহরে যত্রতত্র গাড়ি নিয়ে দাঁড়ালে কিংবা গাড়ি অল্প সময়ের জন্য পার্ক করে পাশের কোনও ক্যাফে কিংবা বেকারি থেকে কেক কিনতে গেলেই ঘনিয়ে আসতে পারে জরিমানার বিপদ। যেমনটা ঘটেছে কলকাতার (Kolkata) এক যুগলের ক্ষেত্রে। এনজেপি অবধি ট্রেনে এসে, অ্যাডভেঞ্চারের সন্ধানে শিলিগুড়ি থেকে বাইক ভাড়া করে তাঁরা বেরিয়ে পড়েছিলেন কার্সিয়াংয়ের উদ্দেশে। শহরের একটি কেকের দোকানের সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে কেক কিনে ফেরার পর দেখলেন, সামনেই দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের দুই কর্মী। চালান কাটাতে প্রস্তুত। কলকাতা থেকে কার্সিয়াংয়ে ঘুরতে আসা সায়ন দত্ত বলছিলেন, ‘কোথাও পার্ক করার জায়গা পাচ্ছিলাম না। আর কেক কিনে ফিরে আসতে আমাদের খুব বেশি হলে মিনিট পাঁচেক লেগেছে। তাতেই এই!’ সায়ন একা নন, কার্সিয়াংয়ে গেলে কোথায় গাড়ি রাখা যাবে আর কোথায় রাখা যাবে না, সেই গোলকধাঁধায় কমবেশি সকলকেই পড়তে হয়। আর এক্ষেত্রে পুলিশ বা প্রশাসনও নিরুপায়। কারণ কড়াকড়ি না করলে যে যানজটের গেরোয় থমকে যাবে গোটা শহরটাই। কার্সিয়াং শহরের মাঝ দিয়ে যে রাস্তাটি যায়, তা খুব একটা চওড়া নয়। তবে প্রতিদিন হাজারো গাড়ির যাতায়াত। এরই মাঝে যদি রাস্তার ওপরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাহলে সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। শহরে নেই পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সমস্যার কথা মেনে নেন কার্সিয়াং ট্রাফিকের ওসি বীরেন্দ্র ছেত্রীও। বললেন, ‘এটাই শহরের মূল সমস্যা এখন। সরকারের তরফে একটা স্থায়ী পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
যেখানে যেখানে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ নো পার্কিং চিহ্নিত করে রেখে দিয়েছে, বুঝতে না পেরে সেখানেই গাড়ি বা বাইক দাঁড় করাচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সুরজ তামাং যেমন বললেন, ‘আমাদের দোকানের সামনে অনেকেই বাইক রেখে চলে যান। মূলত যাঁরা পাহাড়ে নতুন আসেন তাঁরাই এমনটা করেন, তাঁরা জানেন না এখানের নিয়ম কী রয়েছে।’ কার্সিয়াংয়ের বাসিন্দা অ্যালিন ছেত্রীর কথায়, ‘অনেকেই দেখি নো পার্কিংয়ের জায়গাতেই গাড়ি রাখছেন। ট্রাফিকের তরফে তাঁদের বোঝানো হয়, আমরাও মানা করি। আসলে এখানে গাড়ি রাখায় একটু সমস্যা রয়েছে।’
নিত্য পাহাড়ে যাতায়াত শিলিগুড়ির গোপাল সরকারের। পাহাড়ের অনেক জায়গাতেই এই একই সমস্যা, জানালেন তিনি। গোপালের কথায়, ‘কার্সিয়াংয়ে প্রথম প্রথম আমাকেও রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানোর জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কোথায় পার্কিং জোন আর কোনটা নো পার্কিং তা নতুন কারও পক্ষে বোঝা মুশকিল।’ বর্তমানে একটি স্কুলের নীচে, ট্রার্মিনাস সহ শহরের মাঝে এক-দুটি জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন এত মানুষের যাতায়াত এই শহরে, সেখানে সুষ্ঠু ও পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।