কৌশিক দাস, ক্রান্তি: ক্রান্তি (Kranti) ব্লকে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তিনটিতে একজন করে চিকিৎসক থাকলেও কোনও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ নেই। ফলে ব্লকের অর্ধেক মহিলাদের মালবাজার সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল কিংবা জলপাইগুড়িতে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। ব্লকের প্রায় ৮০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির পক্ষে ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ দেখানো মুশকিল। ফলে শারীরিক নানা জটিল সমস্যায় ভুগলেও মহিলাদের কার্যত বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে। ক্রান্তি ব্লকের জনসাধারণের দাবি, সপ্তাহে অন্তত একদিন যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে গাইনি বিভাগে চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে হতদরিদ্র মহিলারা উপকৃত হবেন। ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায় বলেন, ‘উত্তর সারিপাকুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করার কাজ চলছে। আশা করছি কাজ শেষ হলে সমস্যা মিটবে। সেখানে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশ্চয় থাকবেন।’ প্রশাসনের এই আশ্বাস কবে বাস্তবায়িত হয় ক্রান্তিবাসী এখন সেদিকে তাকিয়ে।
জঙ্গল, চা বাগান ও বনবস্তি ঘেরা ক্রান্তি ব্লকের জনসংখ্যা লক্ষাধিক। ব্লকের মৌলানি, ক্রান্তি ও রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সমাজকর্মী করিমুল হকের কথায়, ‘বেশিরভাগ পরিবারের জলপাইগুড়ি বা মালবাজারে যাওয়ার বাসভাড়া বহন করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের উন্নতির জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সামাজিক প্রকল্প আছে।’ বাড়ির লক্ষ্মীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এমন উদ্যোগ নিতে তিনি প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ক্রান্তি ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের মনের কথা বেশিরভাগ সময় চাপা পড়ে যায়। সারাদিন ঘরকন্না ও পরিবারের বাকিদের খেয়াল রাখতে গিয়ে তাঁদের স্বাস্থ্যের কথা কেউ খেয়াল করেন না। একেবারে শেষমুহূর্তে বাড়াবাড়ি হলে তখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ থাকলে দারিদ্র্যপীড়িত ও প্রতিনিয়ত নিজেদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে লড়তে থাকা মহিলারা কিছুটা হলেও চিকিৎসার সুযোগ পাবেন বলে মত ক্রান্তির সচেতন মহলের।
স্থানীয় বাসিন্দা বুলু বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘প্রাইভেটে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ দেখাতে গেলে ন্যূনতম অর্থ জোগাড় করা কষ্টকর। মাসে অন্তত দুইদিন যদি গাইনি বিভাগের চিকিৎসক পাওয়া যেত তাহলে অনেক মহিলা উপকৃত হতেন।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে খবর, অনেক মহিলা বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে আসেন। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁদের সাধ্যমতো পরিষেবা দেন এবং অন্যত্র স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মহিলা সেখানে যান না বা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে না। এতে অসুখ জটিল আকার নেয়। আনন্দপুরের সুশীলা চিকবড়াইকের বক্তব্য, ‘স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ না থাকায় অনেক মহিলা নিজেদের রোগ গোপন করে রাখেন। জীবনের শেষ দিন অবধি তাঁদের অসুখের সঙ্গে লড়তে হয়।’