কৌশিক দাস, ক্রান্তি: ক্রান্তি ব্লকের (Kranti) রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের চেলের পাড় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের কাছে। শীতকালে তো পিকনিকপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই জায়গা। সেই চেলের পাড়ে স্থানীয় কিছু তরুণ রাতারাতি ‘নীতিপুলিশ’ হয়ে ওঠায় তাদের হাতে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বাইরে থেকে ওই এলাকায় আসা তরুণ-তরুণীরা। অভিযোগ, কোনও তরুণ-তরুণীকে সেখানে বসে গল্পগুজব করতে দেখলেই রে-রে করে তেড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা না পড়লেও ওই নীতিপুলিশদের এই আচরণে এলাকাতেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বছর কয়েক আগে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে বন দপ্তর থেকে চেল নদীর চর এলাকায় প্রচুর গাছের চারা লাগানো হয়েছিল। গাছগুলি বড় হওয়ায় এলাকাটির আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে সবুজের ছোঁয়া, অন্যদিকে চেলের জলের টানে আশপাশ এলাকার অনেকেই এখানে আসেন।
গত মঙ্গলবার মালবাজার লাগোয়া এলাকার এক তরুণ-তরুণী বাইক নিয়ে এসেছিলেন এখানে ঘুরতে। মাঝেমধ্যেই তাঁরা আসেন এখানে। তাঁদের অভিযোগ, গাছের নীচে বসে গল্প করার সময় আচমকাই ৫-৬ জনের এক দল এসে রীতিমতো হুমকি দেয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে মেয়েটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। পরে তরুণদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস্তার পান তাঁরা। বৃহস্পতিবার একই ঘটনা ঘটে ক্রান্তির এক তরুণের সঙ্গে। গত সপ্তাহেও বড়দিঘি এলাকার এক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ ওঠে ওই নীতিপুলিশের বিরুদ্ধে। পারিবারিক সম্মানের ভয়ে তাঁদের কেউই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাননি।
এলাকাতেই প্রশ্ন উঠছে, এই নীতিপুলিশরা সাহস পাচ্ছে কীভাবে? ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজন তরুণের দাবি, এলাকার সামাজিক পরিবেশ রক্ষা করতে তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এই দায়িত্ব কে দিয়েছে? হেনস্তা করার অধিকার কীভাবে জন্মায়? নদীর চরে গাছের ছায়ায় কেউ বসে থাকলে তাঁরা কেন আপত্তি করবেন? এইসব প্রশ্ন করতেই পালিয়ে যান ওই তরুণরা।
এই ধরনের ঘটনায় এলাকার সাধারণ বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। কোদালকাটির এক বাসিন্দার কথায়, এতে আমাদের এলাকার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। পিকনিকের মরশুম বাদ দিয়েও বহু মানুষ এখন ঘুরতে আসেন এখানে। কয়েকজন তরুণ বাড়াবাড়ি করছে। সতর্ক করা হলেও শুনছে না। রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিন্টু রায় বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। আমরাও খবর নিচ্ছি।’
ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে চেলের পাড়ে ইকো পার্ক তৈরির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে একাধিক মিটিং হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে আগামীদিনে সেই কর্মকাণ্ড থমকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বড়সড়ো কিছু ঘটনা ঘটার আগে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।