কৌশিক দাস, ক্রান্তি: ক্রান্তি ব্লকের (Kranti) বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে চা চাষের পরিমাণ। বাড়ির পাশে থাকা একফালি জায়গাতেও চা গাছ লাগাচ্ছেন অনেকে। লাভের আশায় তাঁরা এমনটা করলেও এর ফলে আগামীতে খাদ্য সংকট সহ একাধিক বিপদের আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।
ক্রান্তি ব্লকে সরকারি হিসেবে মোট ১২১৮২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। কৃষক বন্ধুর সুবিধা পাওয়া কৃষকের সংখ্যা ৯৫১০। এর বাইরেও অনেক বাসিন্দাই সামান্য জমিতে আবাদ করে বছরভর নিজেদের চাহিদা জোগান। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, চা চাষের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে গৃহস্থের। এক বিঘার কম জমিতেও চা গাছ লাগাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ চা বাগিচার প্রতি কেন আকৃষ্ট হচ্ছেন তাঁরা? উত্তরে বেশকিছু কারণ উঠে আসছে, যেমন- ডুয়ার্সে গত কয়েকবছরে কাঁচা চা পাতার মোটামুটি দাম পেয়েছেন কৃষকরা। ফলে মরশুমি আনাজপাতি চাষের বদলে সেদিকেই ঝুঁকছেন বাসিন্দারা। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশকর্মীরা। কারণ এর জেরে লোকালয় চিতাবাঘের আবাসস্থলে পরিণত হবে। ফলে গৃহপালিত জীবের ক্ষতি হবার পাশাপাশি পরিবারের শিশুদেরও বিপদের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আপালচাঁদ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার নবাঙ্কুর ঘোষের মতে, ‘চা বাগান মানেই চিতাবাঘের নিরাপদ আশ্রয়। বাড়ির আশপাশে চা বাগান করার ফলে বাড়ির ছাগল, গোরু, হাঁস-মুরগি যেমন চিতাবাঘের সহজ শিকার হবে তেমনই বয়স্ক মানুষ ও শিশুদেরও বিপদের আশঙ্কা বাড়বে।’ এই অবস্থায় রাতের বেলা ও ভোরের দিকে শিশুদের বাইরে একা না বেেরাতে দেওয়া ও পর্যাপ্ত আলো নিয়ে আওয়াজ করে যথাসম্ভব দলবেঁধে চলাফেরার পরামর্শ দেন তিনি।
ক্রান্তি ব্লকের রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আপালচাঁদ জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ব্যাপকহারে শুরু হয়েছে চা বাগান তৈরি করা। একসময় সেগুলো কৃষিজমি ছিল। মূলত হাতির উৎপাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে সেখানে চা বাগান তৈরি করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সকলে। এবিষয়ে মাগুরমারির রবিন ওরাওঁ বলেন, ‘হাতির উৎপাতে রাত জেগে ফসল পাহারা দিয়েও ঘরে তোলা যায় না। বেশিরভাগ সময়ে মূলধনটুকুও উঠে আসে না। তাই লাভের মুখ দেখতে চা গাছ লাগানো হয়েছে।’ একই কথা শোনা যায় ষোলঘরিয়ার রাজেশ লাকড়ে, সোমেশ ওরাওঁ, লিপি ওরাওঁদের গলাতেও।
এদিকে, কৃষিজমিতে এভাবে চা বাগান করার ফলে আগামীদিনে সবজির সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। মাস তিনেক আগেও ক্রান্তি ব্লকের বিভিন্ন সবজি বাজারে প্রায় ৩০০ টাকা কেজি দরে রসুন এবং ২০০ টাকায় আদা বিক্রি হয়েছে, যা রেকর্ড। এর কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, আগে গ্রামাঞ্চলের বহু পরিবার বাড়ির পাশের একফালি জমিতেও বিভিন্ন আনাজপাতি চাষ করত। এতে তাঁরা সারাবছর কুমড়ো, লাউ, আদা, রসুন, হলুদ, কচু সহ বিভিন্ন সবজির জোগান পেতেন। কিন্তু চা বাগান করার প্রবণতায় বাজারের ফসলের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন তাঁরাও। ফলে গত কয়েকবছর ধরে বিশেষ করে বর্ষাকালে সবজির দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই বছরে ক্রান্তি ব্লকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হাটে কচুর দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। অথচ একটা সময় ক্রান্তি, চাপাডাঙ্গা, চ্যাংমারির বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলার একাধিক এলাকায় কচু রপ্তানি করা হত।
ক্রান্তির বাসিন্দা কিশোর বিশ্বাস বলেন, ‘বাড়ির পাশের একফালি জমিতেও সম্প্রতি যেভাবে চা বাগান করার ঝোঁক বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সব দিকেই বিপদ।’ পশ্চিম ডুয়ার্সে এমনটা আগে দেখা যায়নি বলেই তিনি জানান।