বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া মোড়ের কাছে খারিজি মাদ্রাসায় জঙ্গিযোগ প্রমাণ হতেই তদন্তের সূত্রে উদ্বেগ ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ ও গৌড়বঙ্গের তিন জেলা প্রশাসনে। কারণ একটাই, এই চার জেলার সীমান্ত লাগোয়া একাধিক প্রত্যন্ত গ্রামে ওই ধরনের মাদ্রাসা গজিয়ে উঠেছে। ওইসব মাদ্রাসা থেকে জেহাদি তৈরির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না নানা তদন্তকারী সংস্থা। জেলা প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেগুলি। জানা গিয়েছে, আরবি পড়ানোর নামে এলাকার শিশুদের ওইসব খারিজি মাদ্রাসায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মাদ্রাসা বলতে এক কিংবা দুই কামরা বিশিষ্ট ঘর। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সেখানে পড়াচ্ছেন গ্রামের কিছু শিক্ষক। তাঁরা কি আদৌ কোনও শিক্ষা দিচ্ছেন, নাকি মগজধোলাই করছেন? সেই প্রশ্ন হরিহরপাড়া কাণ্ডের পর উঠতে শুরু করেছে। এতদিন বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন গুরুত্ব না দিলেও, এবার নজরদারিতে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার, করণদিঘি ও গোয়ালপোখর ব্লক থেকে বছর সাতেক আগে একাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ ও অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, সরকার পোষিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসা ২৩টি। ইংরেজিমাধ্যমে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতি বছর এইসব মাদ্রাসা থেকে পড়ুয়ারা পাশ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলার নাম উজ্জ্বল করেছেন। এখনও করছেন।
জেলা সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘ওই খারিজি মাদ্রাসাগুলিতে কী হচ্ছে, তার দায়ভার মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের নেই। কে, কোথায়, কীভাবে ১৫-২০টা ছেলে নিয়ে বসে পড়ছে, সেটা নজরদারিও সম্ভব নয়। খারিজি মাদ্রাসায় তো কোনও পড়াশোনা হয় না। আজ পর্যন্ত কোনও ছাত্র খারিজি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা যায়নি। তাই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের আগে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’
অবশ্য উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ জেলার সঙ্গে এই জেলাকে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সরকার পোষিত এবং সরকার অনুমোদিত বড় বেশ কিছু মাদ্রাসা জেলায় মুসলিম শিক্ষার অগ্রগতি ঘটাচ্ছে। সেখানে কোথাও দু-একটি খারিজি মাদ্রাসায় কী হল, সেটা নিয়ে এখন জলঘোলা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। সুপরিকল্পিতভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার বদনাম করার চেষ্টা চলছে।’
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় বারুইপাড়া মোড়ের কাছে একটি খারিজি মাদ্রাসায় অভিযান চালায় এসটিএফ। সেখানে ধৃত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অন্যতম জঙ্গি আব্বাস আলিকে গ্রেপ্তার করার পর একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা জেলাতেও খারিজি মাদ্রাসাগুলিতে তার যাতায়াতের হদিস পাওয়া যায়। তা নিয়ে চলছে তদন্ত।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃত জঙ্গি আব্বাস আলি হরিহরপাড়ার ওই ডেরায় ৭ থেকে ১৩ বছর বয়সের নাবালকদের মগজধোলাই করত। জেলার প্রায় সমস্ত এলাকায় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসা এবং সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসা রয়েছে। সেগুলিতে পড়ুয়াদের ভর্তি করতে হবে। তবেই সঠিক শিক্ষা পাবে বাড়ির ছেলেমেয়েরা।