প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: ফের ভয়ংকর বোমা বিস্ফোরণের বলি বঙ্গে (Bomb blast)। এবার ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার (Katwa) রাজৌর গ্রাম। জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতের অন্ধকারে রাজৌর গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে বোমা বাঁধার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরণের জেরে ধূলিসাৎ হয়েছে একাধিক বাড়ি। আর ওই বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক দুষ্কৃতীর। জখম হয়েছে ওই দুষ্কৃতী দলেরই আরও তিন সদস্য। এদিকে, এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে শঙ্কিত খোদ তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (TMC MLA Rabindranath Chatterjee)। তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কাটোয়ার ত্রাস জঙ্গল শেখের দিকেই। তৃণমূল বিধায়কের এই দাবি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার আনুমানিক রাত ৯টা নাগাদ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণে মৃত দুষ্কৃতীর নাম বরকত শেখ (২৮)। বাড়ি বীরভূমের সিয়ালা গ্রামে। জখম তিনজন হল তুফান চৌধুরী, ইব্রাহিম শেখ ও সফিক মণ্ডল। জখমরা সকলেই রাজৌর গ্রামেরই বাসিন্দা। ওই তিনজনই বর্তমানে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ তুফান চৌধুরীকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার ঘোষণা করেছে। পুলিশের দাবি, তুফান দাগী দুষ্কৃতী। একাধিক অপরাধের মামলায় নাম রয়েছে তার। কিছুদিন আগেই সে জেল থেকে ছাড়া পায়। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এলাকাবাসীর অনুমান, বালি খাদানে দখলদারি কায়েম করতেই জেল থেকে বেরিয়ে জঙ্গল শেখের কথামতো বোমা বাঁধার কাজটি করাচ্ছিলেন। তবে এটির পিছনে উদ্দেশ্য যেটাই থাকুক না কেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় যথেষ্টই রাজনৈতিক পারদ চড়েছে। আর তাতে ঘৃতাহুতি পড়েছে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্যে। বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গল শেখ জড়িত বলে অভিযোগ তুলে শনিবার তিনি বলেন, ‘জঙ্গল শেখের মদতেই বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। কাটোয়া দখল করে আমাকে বা আমার দলের কর্মীদের কাউকে প্রাণে মারার জন্য উদ্দেশ্যেই এই বোমা বাঁধা হচ্ছিল।’ উল্লেখ্য, কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক যে জঙ্গল শেখের নাম করেছেন, তিনি একসময় তৃণমূলেই কর্মী ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি জেলে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দলে খবর। এবার পুলিশের তদন্তে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গল শেখের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে কি না, সেদিকেই তাকিয়ে কাটোয়াবাসী।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি প্রমান করে দিয়েছে তৃণমূলের রাজত্বে তৃণমূলের নেতারাও নিজেদের নিরাপদ ভাবেন না। বোমা বারুদের ভয়ে এখন শাসক নেতারাও কাঁপছে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাংলা এখন বোমা-বারুদের আঁতুড়ঘর হয়ে গিয়েছে। যার বিনাশ ঘটাতে পুলিশও ব্যর্থ।’