উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুর্নীতি এবং সরকারের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন ১২ বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। কারফিউ ভঙ্গ করে বিক্ষুব্ধ জনতা সংসদের কাছে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সূত্রের খবর, জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রমেশ লেখাক (Ramesh Lekhak) প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। চলতি বিক্ষোভের আবহে সরকার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।
বিক্ষোভ চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা গাছপালা ও জলের বোতল ছুঁড়ে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করে। কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে।
এই অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন অফিস প্রাথমিকভাবে বানেশ্বর এলাকায় জারি করা কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে। নতুন বিধিনিষেধের আওতায় থাকা এলাকাগুলি হল, রাষ্ট্রপতি ভবন (শীতল নিবাস), উপরাষ্ট্রপতি ভবন, সিংহ দরবারের চারিপাশ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সহ উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন একাধিক এলাকা। প্রধান জেলা কর্মকর্তা ছবিলাল রিজাল জানিয়েছেন, কারফিউ স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৩০ থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই সময়ে জনসাধারণের চলাচল, জমায়েত, বিক্ষোভ বা ঘেরাও কর্মসূচি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
প্রসঙ্গত, নেপালের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকে নিবন্ধন না করার কারণে গত ৪ সেপ্টেম্বর ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। আর সরকারের এই সিদ্ধান্তের জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নেপালের ‘জেন-জি’ অর্থাৎ যুবসমাজ (Gen Z)। এরপরই সোমবার হাজার হাজার তরুণ-তরুণীরা কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ক্রমশই নেপালের সংসদ ভবনের দিকে এগোতে থাকে বিক্ষোভকারীদের মিছিল। একটা সময়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ ভবন সহ বহু সীমাবদ্ধ প্রশাসনিক এলাকায় ঢুকে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এরপরই তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ। সেই সঙ্গে সংসদ ভবন চত্বর সহ রাজধানীর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে কার্ফিউ জারি করে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই নেপাল সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল সমস্ত দেশীয় ও বিদেশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে সরকারের সঙ্গে নথিভুক্ত করাতে হবে। এর জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সাতদিনের সময়সীমা। কিন্তু অধিকাংশ প্ল্যাটফর্মগুলিই সেই নির্দেশ মানেনি। এরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, এক্স, হোয়াটসঅ্যাপ সহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যদিও নেপাল সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, দেশের সুরক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের কণ্ঠস্বর রোধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।