অনির্বাণ চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ: এ যেন ঠিক ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।’
তৃণমূল পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পুরসভার (Kaliyaganj Municipality) শাসক ও বিরোধী দল বিজেপির অধিকাংশ কাউন্সিলারদের বিরুদ্ধে সরকারি ভাত সহ সাম্মানিক হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস এই ইস্যুতে পুরপ্রধানের কাছে পৃথকভাবে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাতে চলেছে।
অভিযোগ, পুরসভার গেরুয়া ও জোড়া ফুলের অধিকাংশ কাউন্সিলার মাসে সরকারি ভাতার পাশাপাশি পুরসভার তহবিল থেকে সাম্মানিক নিচ্ছেন। কারও ক্ষেত্রে দশ হাজার টাকা, কেউ তারও বেশি। পুরপ্রধান রামনিবাস সাহা এবং উপপুরপিতা ঈশ্বর রজক যথাক্রমে পাঁচ হাজার টাকা এবং সাড়ে তিন হাজারের পাশাপাশি ১৫ হাজার এবং ১২ হাজার টাকা নিচ্ছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি কাউন্সিলার গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘এ বিষয়ে পুরপ্রধান সব উত্তর দেবেন।’ কাউন্সিলার হিসাবে পুরসভা থেকে মাসে কত টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন, এই প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, ‘আমি এ বিষয়ে মুখ খুলতে পারব না।’
কিছুদিন আগে এই বিজেপি কাউন্সিলার তথা বিজেপির শহর মণ্ডল সভাপতি গৌরাঙ্গ দাস কালিয়াগঞ্জ পুরসভার সামনে মাইকে বিভিন্ন তৃণমূল পরিচালিত পুর দুর্নীতি নিয়ে সরাসরি পুরপ্রধানকে চোর বলতেও ছাড়েননি।
তাহলে কি গৈরিক কাউন্সিলার গৌরাঙ্গ দাস এখন সম্পর্কে আপনার মাসতুতো ভাই হল? জবাবে রামনিবাস সাহা বলেন, ‘তাই তো হচ্ছে এখন।’ তিনি বলেন, ‘পুরপ্রধান, উপপুরপিতা এবং বিজেপি কাউন্সিলার কার্তিকচন্দ্র পাল এবং নির্দল কাউন্সিলার নন্দদুলাল দাস ছাড়া প্রতি মাসে সরকারি ভাতা সহ সর্বমোট ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত প্রদত্ত অর্থ প্রতিমাসে একই থাকে না। আমিও প্রতি মাসে আনুমানিক ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকি। অতিরিক্ত অর্থ সমস্তটাই কালিয়াগঞ্জ পুরসভার নিজস্ব তহবিলের।’
এই ইস্যুতেই কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলকে ঘায়েল করতে অস্ত্রে শান দিচ্ছে হাত ও কাস্তে হাতুড়ির দল। কংগ্রেস নেতা সুজিত দত্তের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এই দুটি রাজনৈতিক দল মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। পুরসভা থেকে নেওয়া জনগণের করের টাকা যাঁরা নিয়েছেন, তাদের সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। নচেৎ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এলাকার কাউন্সিলারদের কাছে জবাবদিহি চাইবেন।’ শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে সুজিতবাবু বলেন, ‘কোনও কাউন্সিলার আজ পর্যন্ত কত টাকা নিয়েছেন, তা প্রকাশ করতে হবে।’ সিপিএম যুব নেতা অয়ন দত্তের অভিযোগ, ‘খুব শীঘ্রই আমরা এ বিষয়ে কালিয়াগঞ্জ পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারকে স্মারকলিপি দেব।’
পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার মদন মণ্ডলকে এবিষয়ে প্রশ্ন করলে উনি ‘দেখছি’ ‘দেখব’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে প্রশ্নের চাপে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।