অনির্বাণ চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ: কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক। মহিলা পুলিশের নজরদারির জন্য থানায় লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছে কালিয়াগঞ্জ কলেজ (Kaliyaganj Faculty) কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কলেজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক কঠোর বিধিনিয়ম কার্যকর করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে।
কালিয়াগঞ্জ কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ নিয়ে বুধবার উত্তরবঙ্গ সংবাদে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এরপর এদিন দুপুরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ পবিত্র বর্মন লিখিতভাবে কালিয়াগঞ্জ থানার আইসির কাছে ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য মহিলা পুলিশ চেয়ে আবেদন করেন। এই প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক পবিত্র বর্মন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় সমস্যার কথা শুনতে পাচ্ছি৷ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখেই কলেজে ক্লাস চলাকালীন মহিলা পুলিশ মোতায়েনের জন্য থানার আইসির কাছে আবেদন করা হয়েছে৷’ কিন্তু এতদিন তো কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ চাওয়া হয়নি। এখন কেন পুলিশ মোতায়েনের কথা ভাবা হল? জবাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদে একটি খবর দেখলাম৷ তাই, আগাম সতর্কতা বলতে পারেন৷ আমরা কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছি না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি৷’
কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এধরনের কোনও আবেদনপত্র আমি হাতে পাইনি। পেলে অবশ্যই যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’
কালিয়াগঞ্জ শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাহুল সিংহ রায় নাম না করে কালিয়াগঞ্জ কলেজের কয়েকজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে চড়া দামে নোটস বিক্রি সহ ছাত্রীদের মোবাইলে মেসেজ করে উত্ত্যক্ত করার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন। পাশাপাশি কলেজে বহিরাগত ও প্রাক্তন ছাত্রদের দাদাগিরির অভিযোগও সামনে আসে। এরপরেই কলেজের নিয়মশৃঙ্খলা কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক পবিত্র বর্মন জানান, এখনও কলেজের সব ছাত্রছাত্রীকে আই কার্ড দেওয়া হয়নি। খুব দ্রুত সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে আই কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপকের কথায়, ‘আগামীদিনে আই কার্ড ছাড়া কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বহিরাগতদের কলেজে ঢুকতে হলে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে৷ কলেজ খোলা থাকাকালীন পঠনপাঠনের জন্য সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা কলেজে থাকতে পারবে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এসএফআই-এর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রিপন পাল৷ তাঁর বক্তব্য, ‘খুব ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আগামীদিনে রাজ্যের অন্যান্য কলেজের কাছে অনুশাসনের দিক থেকে কালিয়াগঞ্জ কলেজ মডেল হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। তাহলে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারি আমরা।’
এবিভিপি-র রাজ্য সহ সম্পাদক (উত্তরবঙ্গ) দীপ দত্তর প্রতিক্রিয়া, ‘এই কঠোর সিদ্ধান্তগুলো কালিয়াগঞ্জ কলেজ আগে কেন নিল না? যদি এই সিদ্ধান্তের ফলে সমস্যাগুলোর কোনও সুরাহা হয়, তাহলে ভালো।’