সেনাউল হক, কালিয়াচক: কালিয়াচকে আগুন লাগলেই সর্বনাশ। কারণ ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে আসতেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যেমনটা দিন কয়েক আগেই কালিয়াচক ও ইংরেজবাজারের মাঝামাঝি এলাকা মধুঘাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হয়েছিল। অভিযোগ, কালিয়াচক ও তার সংলগ্ন এলাকায় আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রায় এক-দু’ঘণ্টা পর। এখনও কালিয়াচকে কেন দমকলকেন্দ্র হচ্ছে না, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে কটাক্ষ করে পোস্টের ছড়াছড়ি সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এতদিন ধরে কালিয়াচকে কেন দমকলকেন্দ্র হচ্ছে না, তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। দমকলকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ টাকাই বা কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সাবিনার বক্তব্য, ‘কালিয়াচকে দমকলকেন্দ্র তৈরির জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে এবিষয়ে বৈঠক করেছি। প্রাথমিকভাবে যদুপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে।’ কিন্তু জমিটি অন্য দপ্তরের অধীনে থাকায় হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। জমি নিয়ে সমস্যা মিটলেই দমকলকেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
তবে মন্ত্রী যতই বলুন না কেন জনগণের ক্ষোভ কিন্তু তাতে এতটুকু প্রশমিত হচ্ছে না। বিশেষত গত বুধবারের ঘটনা তাঁদের এই ক্ষোভকে আরও বাড়িয়েছে। সেদিন রাতে ইংরেজবাজারের মধুঘাট এলাকায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি ধাবায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে দুটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কালিয়াচক লাগোয়া এই জায়গাটি খাতায় কলমে ইংরেজবাজারের মধ্যে হলেও মূল শহর থেকে অনেকটাই দূরে। ফলে সেখানে আগুন লাগার বেশ কিছুক্ষণ পরে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন পৌঁছায়। ততক্ষণে সবকিছু শেষ। এদিকে, ওই ধাবা থেকে একটু দূরেই ছিল পেট্রোল পাম্প। সেখান পর্যন্ত আগুন ছড়ালে আরও বড় ক্ষতি হতে পারত।
চলতি মাসের ৫ তারিখে গিয়াসু মোড়ে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায় একটি কাঠের ফার্নিচারের দোকান। অভিযোগ, সেখানে দমকলের ইঞ্জিন এসেছিল প্রায় দু’ঘণ্টা পর। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ লক্ষেরও বেশি টাকার জিনিস। এছাড়া গত ১৯ মার্চ রাতে জালালপুরের ডাঙ্গা এলাকায় গদি ও সোফা তৈরির দোকানে আগুন লেগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেখানেও দমকল পৌঁছানোর আগে এলাকাবাসীর চেষ্টাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় প্রায় লক্ষাধিক টাকার জিনিস। এছাড়া কালিয়াচকের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গি এলাকায় গত নভেম্বর মাসের ১ তারিখ একটি খেলনার দোকানে আগুন লেগে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। এর আগেও চৌরঙ্গি এলাকার ৫০টির বেশি দোকান পুড়ে গিয়েছিল। সুজাপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে এবং স্টেশন রোডে শতাধিক প্লাস্টিকের গোডাউন রয়েছে। মাঝেমধ্যেই সেখানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যথেষ্ট দেরিতে পৌঁছোনোয় ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাচ্ছে।
এবিষয়ে আজিজুর শেখ নামে এক ব্যবসায়ীর গলায় ক্ষোভ ঝরে পড়ে, ‘প্রশাসনের তরফে নাকি দমকলকেন্দ্রের জায়গা খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জায়গা ঠিক হচ্ছে না। আর কালিয়াচকে দমকলকেন্দ্র না থাকায় এলাকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অথচ প্রশাসন বিষয়টিতে গুরুত্বই দিতে চাইছে না।’ কার্যত একই কথা শোনা যায় বিপ্লব দাস নামে এক শিক্ষকের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘ইংরেজবাজার থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে সময় লাগে। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। এত কিছুর পরেও কালিয়াচকে কেন দমকলকেন্দ্র করা হচ্ছে না, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।’