সমীর দাস, কালচিনি: ডান হাত অবশ। তবে আঙুলগুলো অল্প অল্প নাড়াতে পারেন। সেই নড়বড়ে আঙুলে পেন ধরলেই যেন ম্যাজিক! সাদা কাগজে সাদরি ভাষায় ফুটে ওঠে কবিতার লাইন। কালচিনি (Kalchini) ব্লকের রায়মাটাং চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তান অমিত লোহরার হাতে কি তাহলে জাদু আছে?
কলেজে পড়ার সময় মাতৃভাষা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তখনই সাদরি ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেন অমিত। এই মাতৃভাষাকে ভালোবেসেই কবিতার পথে হাঁটা শুরু। তাই তো অমিত লেখেন, ‘বাংলা, হিন্দি, নেপালি গুলাব ফুল তইর খিলথে/ আঙ্গনা কর এক কোনা মে সাদরি হো আপন ঠাও খোঁজথে’। অর্থাৎ, বাংলা, হিন্দি, নেপালি গোলাপ ফুলের মতো ঘর ও সমাজের শোভা দেয়, এই রকম সাদরি ভাষাও নিজের বাড়ির উঠানে শোভা বৃদ্ধি করতে চায়।
যদিও আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক নয় তাঁর জীবন। ছোটবেলায় দুর্ঘটনায় তাঁর ডান হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই হাতেই বছর পঁয়ত্রিশের অমিত সাদরি ভাষায় লিখে চলেছেন একের পর কবিতা, লিখেছেন বেশ কিছু গল্পও। ইতিমধ্যে পঞ্চাশটির ওপর কবিতা লিখেছেন অমিত। ১০টির ওপর গল্পও লেখা হয়ে গিয়েছে। তাঁর লেখা কবিতা স্থান পেয়েছে সাদরি ভাষার ম্যাগাজিন ‘জোহার’ পত্রিকার দুটি খণ্ডে। সাদরি ভাষার মানুষের কাছে ইতিমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে অমিতের লেখা কবিতাগুচ্ছ। এছাড়াও ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় সাদরি ভাষার কবি সম্মেলনে নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেন অমিত। সাদরি ভাষার নবীন প্রজন্মের কবিদের মধ্যে অমিত লোহরা নামটি এখন উল্লেখযোগ্য একটি নাম।
তাঁর জীবন প্রথম থেকেই সংঘর্ষে ভরা। ২০০০ সালে বাগান বন্ধ ছিল। সেই সময় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে শিরদাঁড়ায় চোট পেয়েছিলেন অমিত। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তিন বছর চিকিৎসা চললেও সম্পূর্ণ সুস্থ হননি তিনি। ডান হাত তখন থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত। এর জন্য লেখাপড়াতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তবে সংঘর্ষ থেমে থাকেনি। ওই পরিস্থিতিতেও তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বাড়িতে বাবা, মা এবং স্ত্রী রয়েছেন। রায়মাটাং চা বাগানের বিরসা চক লাইনে বাড়ি অমিতের। অমিত বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সাদরি ভাষায় গান লিখতাম। বড় হয়ে ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে কবিতা লেখা শুরু করি।’ তাঁর কবিতা ও গল্পে স্থান পায় চা বাগানের শ্রমিকদের সংঘর্ষ।