পূর্ণেন্দু সরকার ও নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি ও কুমারগ্রামদুয়ার: কেএলও চিফ জীবন সিংহকে (Jibon Singha) ‘কামতারত্ন’ সম্মান জানাল উত্তরবঙ্গের কামতাপুরি শীর্ষ নেতৃত্ব। গত ১৫ জুন অসমের বঙ্গাইগাঁওয়ে বীরজোড়া পাবলিক লাইব্রেরিতে এক অনুষ্ঠানে জীবনের বড় মেয়ে তিথির হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। ভিডিও বার্তায় উদ্যোক্তাদের শুভেচ্ছা জানান জীবন। অসমে কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের দ্বিতীয় বার্ষিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, জুলাই মাস থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শান্তি চুক্তি রূপায়ণের দাবিতে ব্লকে ব্লকে ধর্না, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি কর্মসূচি নেবে কাউন্সিল।
কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে জীবন সিংহকে সামনে রেখে কোনও কর্মসূচিতে সমস্যা হবে, এমন ধারণা থেকেই অসমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে জীবনের মেয়ে ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক গিরীন্দ্রনাথ রায় সহ অনেকে। প্রসঙ্গত, জীবনের ছোট মেয়ে প্রীতি আলিপুরদুয়ারের উত্তর বড় হলদিবাড়িতে মামাবাড়িতে এবং বড় মেয়ে তিথি জীবনের বোন সুমিত্রা ও ভগ্নিপতি ধনঞ্জয় বর্মনের সঙ্গে বারবিশা লাগোয়া নাজিরান দেউতিখাতায় থাকেন। বর্তমানে তাঁরা সবাই অসমে রয়েছেন।
তিথি ফোনে বলে, ‘বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়। বাবাই ফোন করে পুরস্কার গ্রহণের কথা বলেছিল। বাবার হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করে ভালো লেগেছে। বাবা সবসময় বলে মন দিয়ে পড়াশোনা করে প্রশাসনিক স্তরে বড় অফিসার হতে। তবে আমার ইচ্ছা নার্স হয়ে মানুষের সেবা করা।’ সুমিত্রা বলেন, ‘দাদার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। মেয়ের এবং আমাদের সবারই খোঁজখবর নেন। সেদিন বঙ্গাইগঁাওয়ে অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। তিথি গিয়েছিল। তিথি এবছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। ওর কলেজে ভর্তির জন্য খোঁজখবর নিচ্ছি।’
অসমে উত্তরবঙ্গের কামতাপুরি নেতাদের সক্রিয় হয়ে ওঠার দিকে নজর রাখছে এ রাজ্যের পুলিশও। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘অনুষ্ঠান অসমে হয়েছে। তবে আমাদের এদিকে কোনও কার্যকলাপ হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে আমরা নজরদারি আগে থেকেই রাখছি।’
কাউন্সিলের সভাপতি তপতী মল্লিক বলেন, ‘কামতাপুরি ও রাজবংশী জনজাতির জন্য ৩২ বছর ধরে জঙ্গলে থেকে সশস্ত্র আন্দোলন করেছেন জীবন সিংহ। গত ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ভারত সরকারের হেপাজতে রয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের সঙ্গে জীবন সিংহ পৃথক রাজ্য, ভাষা সহ একগুচ্ছ দাবিতে শান্তি আলোচনা করেছেন। অথচ কেন্দ্রের তরফে শান্তি চুক্তি রূপায়ণে বিলম্ব করা হচ্ছে। আগামী ২০ জুলাই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত করার জন্য দাবিপত্র পাঠানো হবে। তারপর উত্তরবঙ্গে ব্লক স্তরে একই দাবিতে আন্দোলনে নামবে কেএসডিসি।’
কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক দেবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আমরা সাংগঠনিক দিক থেকে আমাদের জনজাতির ভোটব্যাংকের মাধ্যমে যে কোনও রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখি। আগামী দু’মাসের মধ্যে কেন্দ্র শান্তিচুক্তি রূপায়িত করে কি না, তার দিকে নজর থাকবে। না হলে পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা ভোটে আমাদের কর্মী-সদস্যরা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবেন।’
কেন্দ্রের হেপাজতে থাকায় জীবন সিংহ নিজে অসমের অনুষ্ঠানে আসেননি। তঁার কথামতোই তঁার মেয়ের হাতে ‘কামতারত্ন’ সম্মান ও ২৫ হাজার টাকা কেএসডিসি-র তরফে থেকে তুলে দেওয়া হয়৷