রাজু সাহা, শামুকতলা: কর্তৃত্বের লড়াইয়ে প্রাণ গেল একটি পূর্ণবয়স্ক মর্দা মাকনা হাতির। বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের জয়ন্তী রেঞ্জের দক্ষিণ জয়ন্তী বিটের জঙ্গলে ঘটনাটি ঘটেছে (Jayanti)। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন বক্সা (পূর্ব) বিভাগের বনকর্তারা। জয়ন্তীর রেঞ্জ অফিসার এবং সমস্ত বিট অফিসার ঘটনাস্থলে আসেন। বন দপ্তরের পশু চিকিৎসকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাতির ময়নাতদন্ত করার পর সৎকার করা হয়। এলাকা বা সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ের কারণেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে বন দপ্তর স্বীকার করে নিয়েছে।
বন দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, দু’দিন আগে ওই জঙ্গলে দুটি মর্দা হাতির মধ্যে লড়াই হয়। বনকর্মীরা টের পেয়ে জঙ্গলের ভিতরে তল্লাশি চালিয়েও সেদিন কোনও হাতির খোঁজ পাননি। তবে দু’দিন পর শুক্রবার দুপুর নাগাদ হাতির চিৎকার শুনে বনকর্মীরা জঙ্গলে গিয়ে দেখতে পান একটা জখম মাকনা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ঘটনাস্থলে বনকর্তারা এবং বন দপ্তরের চিকিৎসকরা আসেন। শুক্রবার দুপুর থেকেই হাতিটির চিকিৎসা শুরু হয়। বনকর্তারা জানিয়েছেন, লড়াইয়ে ওই হাতিটির পিছনের পা ভেঙে যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ক্ষত তৈরি হয়। একটি জায়গাতেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল সেটি। রাত অবধি চিকিৎসা চলে। চিকিৎসকরা ফিরে যাওয়ার পর সম্ভবত গভীর রাতে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
বনকর্তাদের অনুমান, হাতিটির জখম এতটাই বেশি ছিল যে চিকিৎসায় সেভাবে সাড়া দেয়নি। ক্ষত দেখে মনে হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী হাতিটি দাঁতাল ছিল। হাতিটির গায়ে যে ধরনের ক্ষত ছিল তা অন্য হাতির দাঁত লেগেই তৈরি হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের ডিএফও (ইস্ট) অরিজিৎ বসু বলেন, নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের জেরে বছর ৫০-এর মর্দা হাতিটি মারা গিয়েছে। বনকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দারাও হাতির লড়াইয়ের আওয়াজ শুনেছেন। এছাড়া গতকাল দুপুর থেকে জখম হাতিটির চিৎকার জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়েছিল। চলতি মাসে কার্সিয়াংয়ের জঙ্গলে দুটি মর্দা হাতির মধ্যে লড়াইয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আলিপুরদুয়ারে ক্ষমতা ও সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে এক দাঁতালের কোমর ভেঙে গিয়েছিল। চারদিন পর সেই দাঁতালের মৃত্যু হয়। তার আগে কুমারগ্রামে একই ধরনের লড়াইয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে বিন্নাগুড়িতেও দাঁতাল ও মাকনা হাতির লড়াই হয়েছিল। দাঁতালের দাঁত মাকনা হাতির পেট ফুঁড়ে ঢুকে গিয়েছিল।
এই ধরনের লড়াই হাতিদের মধ্যে নতুন নয়। এলাকা, দল বা সঙ্গিনী দখলের ক্ষেত্রে এই ধরনের লড়াইয়ের ঘটনা ঘটে। সাধারণত দেখা যায়, এসব লড়াইয়ে দাঁতালরাই বেশির ভাগ সময় জেতে। এবারও সেটাই ঘটেছে। বনকর্তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সঙ্গিনী দখলের জন্য শুধু নয়, দলে আধিপত্য করার জন্যও বুনো হাতিদের মধ্যে লড়াই হয়। শক্তিশালী মর্দা হাতি অন্য মর্দাদের পরাজিত করে এবং দল, এলাকা বা সঙ্গিনীর দখল নিতে পারে।