সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: অনুপ্রিয়া রায়। তিনি জ্যাভলিন থ্রোয়ার (Javelin Thrower)। জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী (Nationwide stage athletics championship)। কিন্তু তাঁর অনুশীলন এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে বাঁশের সরঞ্জাম দিয়ে! তাতেও তাঁর সোনাপ্রাপ্তি নিশ্চিত থাকে। কিন্তু আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নটা ফিকে হতে থাকে।
অনুপ্রিয়া মানিকোর হাইস্কুলের ছাত্রী। রাজ্যস্তর সহ ইস্ট জোনাল জাতীয় জুনিয়ার অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে জ্যাভলিন অর্থাৎ বর্শা নিক্ষেপ করে সোনার পদক পেয়েছেন। সম্প্রতি মহাসাড়ম্বরে মানিকোর ও খাগাইল টঙ্কনাথ সরকার হাইস্কুলের মাঠে শেষ হল কুশমণ্ডির ৩১তম জোনাল স্পোর্টস। সেখানেই অনুপ্রিয়া বাঁশের বর্শা দিয়েই বিজয়ী হন। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান তাঁর কোচ থেকে শুরু করে ক্রীড়া শিক্ষক সকলেই।
অ্যাথলিটদের প্রয়োজনীয় ক্রীড়া সরঞ্জামের অভাব নিয়ে মুখ খুলেছেন স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক শ্যামলেশ সরকার ও অনুপ্রিয়ার কোচ কিরণপ্রকাশ মাহাতো। শ্যামলেশের বক্তব্য, ‘রাজ্য বা জাতীয় পর্যায়ে বাঁশের বর্শা দিয়ে প্রতিযোগিতা হয় না। সেখানে ন্যালকো জ্যাভলিন অর্থাৎ উন্নত ফাইবার কিংবা অ্যালুমিনিয়াম স্টিক দিয়ে তৈরি রেঞ্জার জ্যাভলিন ব্যবহার হয়। জোনাল পর্যায়ে অনুপ্রিয়াদের প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বাঁশের বর্শা হাতে। একটা উন্নত ফাইবার কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের জ্যাভলিনের দাম ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।’
মানিকোর হাইস্কুলের শিক্ষকরা ও কোচ কিরণপ্রকাশ বহু কষ্টে অনুপ্রিয়াকে উন্নতমানের জ্যাভলিন কিনে দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ের জন্য অনুশীলন করলেও জোনাল পর্যায়ে বাঁশের জ্যাভলিন ৪০ মিটার দূরে পাঠিয়েছে অনুপ্রিয়া। প্রতিযোগিতায় ধারে কাছে আসতে পারেনি কেউ।
অনুপ্রিয়ার কথায়, ‘স্যররা একটা ভালো জ্যাভলিন কিনে দিয়েছেন। কিন্তু সেটা তো আমি বড় খেলায় ব্যবহার করি। জোনাল পর্যায়ে খেলতে গেলে বাঁশের বর্শা ব্যবহার করতে হয়। আমার অনেক দূরে যাওয়ার ইচ্ছে। এভাবে চললে আমি কীভাবে অনেক দূরে এগোব?’
পড়ুয়াদের জন্য স্কুলগুলিতে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার ফান্ড থাকে না। এবারের জোনাল স্পোর্টসের সম্পাদক গৌতম দাসের কথায়, ‘২০১৬ সালের পর থেকে স্কুলগুলো ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা করার জন্য কোনও অর্থ পায়নি। জোনাল বা মহকুমা পর্যায়ে বাঁশের তৈরি জ্যাভলিন নিক্ষেপ করে রাজ্য বা জাতীয় পর্যায়ে হঠাৎ করে সেই প্রতিযোগীর হাতে উন্নতমানের জ্যাভলিন এলে প্রতিযোগীরা বিভ্রান্ত হবে, সেনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’
ফুটবল, ভলিবল থেকে শুরু করে সমস্ত খেলার সরঞ্জাম স্কুলগুলো নিজস্ব ফান্ড থেকে যতটা সম্ভব উৎসাহীদের জন্য খরচ করে বলে জানান কুশমণ্ডি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ফিরোজ আলম। ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস দক্ষিণ দিনাজপুরের সাধারণ সম্পাদক শুভ্রজিৎ মিশ্রের বক্তব্য, ‘আমি এই পদে নতুন এসেছি। আগামী বছর যাতে এই অসুবিধে না থাকে সেই চেষ্টা করব।’ কবে হাইস্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীরা রাজ্য বা জাতীয় পর্যায়ে খেলার সরঞ্জাম পাবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে প্রতিটি হাইস্কুল।