পূর্ণেন্দু সরকার ও রামপ্রসাদ মোদক, জলপাইগুড়ি: জেলার বাইরে থেকে জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিসে (জেই) (Japanese Encephalitis) আক্রান্ত হয়েও আসছেন অনেকে। শুয়োরের উপস্থিতি নেই, এমন এলাকাতেও জেই-তে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আক্রান্ত ও মৃতদের এলাকায় গিয়ে কেস স্টাডি করে এই তথ্য পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও জানা গিয়েছে, শুধু শুয়োর, মশাই নয়, জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস বহন করে পরিযায়ী পাখিও।
জেলায় এখন পর্যন্ত জেই-তে পাঁচজন আক্রান্তের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধীন কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমাল হেলথ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিকালস সংস্থা থেকে দুই সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল জলপাইগুড়িতে এসে নয়টি ব্লকেই স্বাস্থ্য দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে কেস স্টাডি শুরু করেছে। জেলার নয়টি ব্লকেই খোঁয়াড় থেকে একশোর মতো শুয়োরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, সংক্রমণের হার কমাতে আপাতত শিশুদের জেই ভ্যাকসিন দেওয়া ছাড়া বিকল্প কিছুই ভাবছে না স্বাস্থ্য ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর।
বানারহাটে সোমবার যৌথ প্রতিনিধিদল গিয়েছিল। সেখানে একজন পরিযায়ী শ্রমিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভিনরাজ্য থেকে বাড়িতে এসেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এদিকে, সদর ব্লকের বালাপাড়ায় যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর এলাকায় শুয়োরের খোঁয়াড় নেই। কেস স্টাডিতে উঠে আসছে, এলাকার শুয়োর থেকেই ভাইরাস ছড়াবে, এমনটা নয়। বাইরে থেকেও এই জেই-তে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপার ঘটছে। ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমাল হেলথ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিকালস-এর বিশেষজ্ঞ তাপস সরকার জানান, পরিযায়ী পাখিরাও জেই-এর ভাইরাস বহন করে। তাদের বিষ্ঠায় জেই-এর ভাইরাস থাকে। সেখান থেকেও এই ভাইরাস মানুষের শরীরে আসতে পারে।
সিএমওএইচ ডাঃ অসীম হালদার বলেন, ‘আমরা সমস্ত আক্রান্ত ও মৃতের কেস স্টাডি শুরু করেছি। কে কীভাবে আক্রান্ত হলেন, সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুধু শুয়োর বা পরিযায়ী পাখি নয়। ধানখেত, পাট পচানোর জলেও মশার লার্ভা জন্ম নেয়। সেদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের বাড়ি সহ আশপাশের এলাকার শিশুদের জেই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। মশা যাতে না কামড়ায়, সেদিকে নজর দিতে বলা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’
এদিকে শুয়োরের রক্ত পরীক্ষার নমুনা প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর সংগ্রহ করে কলকাতার ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছে। যদিও সেই নমুনা থেকে সব পরীক্ষা হবে না। তাই উত্তরপ্রদেশের সেন্টার ফর অ্যানিমাল ডিজিস রিসার্চ অ্যান্ড ডায়গনোসিস-এর গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উপ অধিকর্তা ডাঃ সুবোধ পাল বলেন, ‘জেলার নয়টি ব্লকের কোথায় শুয়োরের রক্তে পজিটিভ কেস আছে, তা খুব তাড়াতাড়ি জানা সম্ভব নয়। খোঁয়াড়গুলিকে মশারির নেট দিয়ে ঘিরে দিতে বলা হয়েছে। খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
জেই-তে আক্রান্তদের মধ্যে রাজগঞ্জের দুজন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাজগঞ্জের সুভাষপল্লি এলাকা ঘুরে দেখে বিশেষজ্ঞ দল। জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। তাঁর নাম শ্যামলাল হাজরা। আরেকজন এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ১৭ বছরের ওই তরুণের নাম রফিকুল ইসলাম। এদিন আক্রান্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন রাজগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ রাহুল রায় সহ একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী।