অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: স্কাইওয়াক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা, মন্দিরের মূল গেট বন্ধ রাখা, পুরুষ ও মহিলাদের স্নানের ঘাট আলাদা করে দেওয়ার মতো একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হচ্ছে জল্পেশে (Jalpesh) শিবরাত্রির পুজো ও মেলায় ভিড় সামলাতে। বুধবার জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে জল্পেশ মন্দির, মন্দির সংলগ্ন সুবর্ণকুণ্ড, জল্পেশমেলার মাঠ পরিদর্শন করেন। সেখানে ময়নাগুড়ি ব্লক প্রশাসন ও জল্পেশ মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিবচতুর্দশীর দিন সংগমে ডুব দিয়ে শেষ হচ্ছে প্রয়াগের কুম্ভস্নান পর্ব। আর ওই দিন থেকেই ময়নাগুড়ির জল্পেশে শুরু হচ্ছে শিবরাত্রি উৎসবের। কুম্ভের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভিড় সামলাতে আগে থেকেই একগুচ্ছ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেছে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর জল্পেশে শিবরাত্রির পুজো ও ১০ দিনের মেলায় পুণ্যার্থীদের ভিড় অনেকটাই বেশি থাকবে বলে অনুমান প্রশাসনের কর্তাদের। বুধবার প্রশাসন ও পুলিশকর্তাদের পরিদর্শনের পর প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, প্রয়াগে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি যাতে জল্পেশে না তৈরি হয় সেজন্য মন্দির চত্বরে প্রবেশের মূল গেট বন্ধ রাখা হবে। পাশের নবনির্মিত গেট দিয়ে পুণ্যার্থীরা প্রবেশ করবেন। মন্দিরের সামনের খোলা অংশে এবার আর পুণ্যার্থীরা যেতে পারবেন না। দ্বিতীয় গেট দিয়ে ঢোকার পর তাঁদের স্কাইওয়াক দিয়ে মন্দিরের সামনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। পুজো দিয়ে পুণ্যার্থীরা স্কাইওয়াকের নীচের অংশে থাকা গেট দিয়ে বের হতে পারবেন। ভিড়ের চাপে যাতে ব্যারিকেড ভেঙে না পড়ে সেজন্য মন্দির চত্বরে বাঁশের ব্যারিকেড এবার রাখা হচ্ছে না। তার বদলে লোহার বড় ব্যারিকেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্দির সংলগ্ন সুবর্ণকুণ্ডে স্নান করে পুণ্যার্থীরা শিবের মাথায় জল ঢালেন। সুবর্ণকুণ্ডের পাঁচটি ঘাট এবার দুটি ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য নির্দিষ্টভাবে। স্কাইওয়াকের পাশ দিয়ে সুবর্ণকুণ্ডে যাওয়ার রাস্তা করা হয়েছে। মন্দির চত্বরের ভিতরের টিকিট কাউন্টার এবার খোলা থাকবে না। তার বদলে বাইরের দিকে একাধিক কাউন্টার খোলা হচ্ছে। শিবরাত্রির দিন মন্দিরের প্রবেশপথে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
জেলা পরিষদ পরিচালিত জল্পেশমেলা চত্বরে এবার রাস্তার ওপর কোনও দোকান বসতে দেওয়া হবে না। রাস্তার ওপর কোনও দোকানের ছাউনিও রাখতে দেওয়া হবে না। মূল রাস্তা, এমনকি পকেট রাস্তাগুলি ছেড়ে ব্যবসায়ীদের দোকান সাজানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জল্পেশ মন্দিরের অফিস ঘরের পাশে সিসি ক্যামেরায় নজরদারির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। পুকুর সন্নিহিত এলাকায় মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। শিবরাত্রির দিন সূর্য ওঠার আগেই পুণ্যার্থীরা স্নান করার জন্য পুকুরে চলে আসতে পারেন। সেজন্য আগের রাত থেকেই বাড়তি পুলিশকর্মী, সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের মোতায়েন করা হবে ঘাটে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।
জল্পেশ মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেব জানান, ‘গতবছর শিবরাত্রির দিন মন্দির ও মেলা মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছিলেন। এবার সেই সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে আমাদের ধারণা। প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
এদিন পরিদর্শনে পুলিশ সুপার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীর আহমেদ, ডিএসপি (ক্রাইম) শান্তিনাথ পাঁজা, ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ, ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু সহ ময়নাগুড়ি দমকলকর্মীরা। পুলিশ সুপার বলেন, ‘অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়া হবে না। ভিড় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যারিকেড ও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।’ বিডিও বলেন, ‘শিবরাত্রির মেলা উপলক্ষ্যে প্রশাসনের তরফে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’