সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: স্বাধীনতার আগে জমি দান করেছিলেন মৌলবি মেছুয়া মহম্মদ। যত দিন গিয়েছে, তত দখলদারি বেড়েছে। জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ধূপগুড়ি (Dhupguri) শহরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে দান করা এই বিশাল পরিমাণ জমি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই৷ মূলত সেই কারণেই এই মুহূর্তে মসজিদের স্থায়ী কমিটি গঠনও স্থগিত হয়ে রয়েছে।
কীভাবে এত জমি বেহাত হল, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব ধূপগুড়ি আঞ্জুমান কমিটির সম্পাদক আমজাদ খান। তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা চাই মেছুয়া মহম্মদের দান করা সমস্ত জমি চিহ্নিত করে উদ্ধার করা হোক।’
১৯৪৩ সালের ২৬ নভেম্বর ধূপগুড়ি জামে মসজিদের নামে পাঁচশো একরের বেশি জমি দান করেন সেই সময়কার এক ধনী জোতদার তথা ব্যবসায়ী মৌলবি মেছুয়া মহম্মদ। ধূপগুড়ি ব্লকের পূর্ব আলতাগ্রাম, মধ্য বোরাগাড়ি, উত্তর বোরাগাড়ি এবং ফালাকাটা ব্লকের ঘাটপাড় সরুগাঁও- এই চার মৌজায় ছড়িয়ে ছিল এই বিপুল পরিমাণ জমি। দানপত্র দলিলে উল্লেখ করা হয়, এই জমি থেকে যা আয় হবে তা ধূপগুড়ি জামে মসজিদের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, অনাথালয় তৈরি ও পরিচালনা তথা পথচলতি মানুষের আশ্রয়ের মতো জনসেবায় কাজে লাগাতে হবে। অভিযোগ, সেসব করা দূরের কথা, উলটে কয়েক বছর আগে ধূপগুড়ি জামে মসজিদ পুনর্নির্মাণের কথা বলে বেশ কিছুটা জমি বেআইনিভাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মসজিদের নামে থাকা ওয়াকফ জমি বেচে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সর্বশেষ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা মোতোয়ালি ফজলে করিমের বিরুদ্ধে। তিনি সম্পর্কে জমিদাতা মেছুয়া মহম্মদের নাতি।
২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে কয়েক দফায় ১১ জনকে সাড়ে ছয় বিঘা জমি বিক্রি করেন মোতোয়ালি করিম এবং মসজিদ কমিটির সম্পাদক আতাউর রহমান। তাঁদের দাবি, জমি বেচে পাওয়া টাকা মসজিদ ভবন সংস্কারের কাজে লেগেছে।
মসজিদের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানালেন, আইন অনুসারে ওয়াকফ সম্পত্তি দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি লিজ দেওয়া যায়। কিন্তু বিক্রি করা যায় না। যদিও জমি বিক্রিকে কেন্দ্র করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করিমের।
এদিকে, সেই জমি কিনে বেকায়দায় পড়েছেন ভেমটিয়া এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমানের মতো ১১ জন। মতিয়ার বলেন, ‘দুই বছর ধরে বিএলএলআরও অফিস চষে চলেছি। আধিকারিকরা বলছেন, এই জমি ওয়াকফের। তাই আমাদের নামে রেকর্ড হবে না। তাহলে তো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
১৬০০ বিঘার কাছাকাছি দান করা জমির মধ্যে শেষপর্যন্ত ধূপগুড়ির পূর্ব আলতাগ্রামে ৩০ বিঘা এবং ফালাকাটা ব্লকে ৩০ বিঘা মিলে মোট প্রায় ৬০ বিঘা জমি অবশিষ্ট ছিল মসজিদের কাছে। তাতেও ছিল আধিয়ার বা বর্গাদারদের দখল। প্রাক্তন কমিটির দুই কর্মকর্তা মিলে পূর্ব আলতাগ্রামের ১৩ বিঘা জমি চিহ্নিত করে তার অর্ধেক আধিয়ারদের ছেড়ে দেন। বাকি অর্ধেক জমি বিক্রি করেন।
দীর্ঘদিন ধূপগুড়ি জামে মসজিদের সঙ্গে যুক্ত পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সদস্য আবু তাহের বলেন, ‘জমি উদ্ধার ও রক্ষায় প্রশাসনিক উদ্যোগও ঢিলেঢালা।’