অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: একটা সময় ছিল যখন দেশি-বিদেশি কমিকসে বুঁদ হয়ে ছেলেবেলা কাটত অধিকাংশ বাঙালি কিশোর-কিশোরীর। টিনটিন, অ্যাস্টারিক্স, হাঁদা-ভোঁদা, চাচা চৌধুরী, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল দ্য গ্রেট- আরও কত কী! স্মার্টফোনের যুগে সেসব অতীত। অ্যানিমেশন সিনেমা, কার্টুন এসব থাকলেও পড়ার বইয়ের আড়ালে রংবেরংয়ের কমিকস পড়ে মায়ের বকুনি খাওয়ার দিন কবেই গিয়েছে চলে।
কমিকস বিমুখ এই সময়ে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আস্ত একটি কমিকস বই প্রস্তুত করে তাক লাগিয়ে দিল ঋষভ রায়। জলপাইগুড়ি শহরও (Jalpaiguri) পেয়ে গেল নিজের প্রথম সুপার হিরোকে। ঋষভের সৃষ্টি সুপার হিরো চরিত্রের নাম দ্য ব্যাটেল ম্যান। বইয়ের নাম ওই চরিত্রেরই নামে। এটা প্রথম খণ্ড। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ব্যাটেল ম্যানের যাত্রা শুরু। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে এই সুপার হিরো। কাহিনীতে রয়েছে জম্বি-যোগ। এছাড়া বাস্তব জীবনের অনেক মজার কাহিনীকে ছবিতে তুলে ধরেছে ঋষভ। তবে পুরো কাহিনী এখনই বলে দিতে সে নারাজ।
তার কথায়, ‘বইটি প্রকাশিত হলে সবাই পড়ে পুরো গল্পটা জানুক।’ ঋষভ নামজাদা কেউ নয়, সে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বয়স মাত্র ১৩। পড়ে শহরেরই এক বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে। আদি বাড়ি বেলাকোবায়। পড়াশোনার সূত্রে বছর দুয়েক ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে জলপাইগুড়ি শহরে। তার সৃষ্টি ব্যাটেল ম্যানের প্রথম খণ্ডটি সাদা-কালো। বইটি জনপ্রিয়তা পেলে পরবর্তী খণ্ডগুলি রঙিন করার ইচ্ছা রয়েছে ঋষভের।
বইটি ৩০ পাতার। ছবি আঁকা ও সংলাপ লেখার কাজ শেষ। এখন শেষমুহূর্তের কাজ চলছে। যাকে বলে, ফিনিশিং টাচ। ঋষভ জানিয়েছে, সে আঁকায় জেল পেন ও ডিপ পেন ব্যবহার করেছে। তবে বইটি ছাপানো এবং বিপণন নিয়ে চিন্তায় ঋষভের বাবা নিরঞ্জন রায়। তিনি ছেলের এই অভিনব কীর্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছোট থেকে কমিকস পড়ত। পড়াশোনার ফাঁকে কখন যে কমিকস বই বানিয়ে ফেলল, টেরই পেলাম না। এটা ওর প্রথম বই। অবশ্যই ছাপানোর ব্যবস্থা করব।’
ছবি আঁকার প্রতি ভালোবাসা ঋষভ মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে। মা শুক্লা রায় পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী হলেও ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। তাঁর কাছেই আঁকা শিখেছে ঋষভ। শুক্লা বলেন, ‘আঁকা হয়তো আমার কাছে কিছুটা শিখেছে। কিন্তু গল্পের ভাবনা সম্পূর্ণ ওর। অনেকদিন ধরে ও বইটা খুব যত্ন করে তৈরি করছে। জলপাইগুড়ি থেকে এরকম কাজ আগে হয়েছে কি না, আমাদের জানা নেই।’